চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির আবাসিকে ন্যুনতম বিল ছিল ১৭৮ টাকা। কিন্তু এখন দাম বৃদ্ধি করে করা হয় ৫৯৬ টাকা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ন্যূনতম বিল ছিল ৫০৬ টাকা, এখন ধার্য্য করা হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এভাবে চট্টগ্রাম ওয়াসা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পানির বিল তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি করল।
নগরবাসীর অভিযোগ, কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়াই ওয়াসা পানির দাম বৃদ্ধি করেছে। এটি অনেকটা চাপিয়ে দেওয়ার মত। অথচ নিয়মিত পানি সরবরাহের বেলায় ওয়াসার কোনো তৎপরতা নেই।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, অনেক আগেই পানির ন্যুনতম বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে পানি সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় তা কার্যকর হয়নি। কিন্তু এখন পানি সরবরাহ নিয়মিত হওয়ায় দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, পানির উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াসার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য সরকার দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু পানির সঠিক বিল না দেওয়ার জন্য অনেক গ্রাহকই কারসাজি করে মিটার চুরি হয়েছে বলছে। এখন ন্যুনতম বিল বৃদ্ধি করায় সবাই মিটার ব্যবহার করবেন। তবে প্রকৃত কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে লিখিত আবেদন করলে যাচাই করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পানির দাম বাড়াতে গণশুনানির নিয়ম আছে। কিন্তু তারা তা না করে দাম বাড়িয়েছে। এটি নগরবাসীকে চাপিয়ে দেওয়ার মত। তাছাড়া বহুতল ভবনের মালিকের কাছ থেকে পানির প্রকৃত দাম আদায় করতে গিয়ে নিম্ন আয়ের ও একক পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমরা বলব, এ বৈষম্য নিরসনে ওয়াসা সব গ্রাহকের জন্য মিটার চালু করতে পারে। তখন পানির খরচের অনুপাতে বিল পরিশোধ করবেন। পানি কম খরচ করে কেন বাড়তি বিল দিবেন?
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার বর্তমান সংযোগ লাইন আছে ৬৩ হাজার ৫৪৫টি। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ আবাসিক এবং ১২ শতাংশ অনাবাসিক। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে ওয়াসা ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প’- এর মাধ্যমে দৈনিক ২৮-২৯ কোটি লিটার পানি নতুন করে সরবরাহ করছে। এর আগে দৈনিক পানি সরবরাহ করত ১৭-১৮ কোটি লিটার। চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৬৬ এর ২২(২) ধারা অনুযায়ী ওয়াসা নিজেই পানির দাম বছরে একবার করে পাঁচ শতাংশ হারে বাড়াতে পারে। এর বেশি বাড়ালে তাদের সরকারের অনুমোদন নিতে হয়।
জানা যায়, এতদিন গ্রাহককে ন্যুনতম ২১ ইউনিটের বিল দিত। কিন্তু এখন থেকে ন্যুনতম বিল দিতে হবে ৬৮ ইউনিটের। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে আবাসিকে পানির দাম ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম আবাসিকে পড়বে ৯ টাকা। আগে ছিল ৭ টাকা ৬১ পয়সা। বাণিজ্যিকে প্রতি ইউনিট পানির খরচ পড়বে ২৫ টাকা, আগে ছিল ২১ টাকা ৫৬ পয়সা।
জানা যায়, ওয়াসা গত ৭ ডিসেম্বর অভ্যন্তরীণ ক্ষতি কমানোর যুক্তি দেখিয়ে পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘শ্রমিক কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ওয়াসার এক ইউনিট পানি উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৫ দশমিক ০৬ টাকা। আর গড়ে বিক্রি হয় ৯ দশমিক ২৭ টাকায়। তাছাড়া ‘ওয়াসার চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট ও স্যানিটেশন প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের কারণে কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বলে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নাজুক অবস্থায় পড়েছে’। দাম বাড়ানোর যুক্তিতে আরো বলা হয়, ‘২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোট ব্যয় হয় ৭৭ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় ৩১ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা ও পানি উৎপাদনে বিদ্যুতের জন্য ব্যয় হয় ২৯ দশমিক ৯২ কোটি টাকা। অন্যদিকে পানি বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৫৩ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকছে ২৪ দশমিক ২৫ কোটি টাকা।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ