চৈত্র মাসের অকাল বন্যার পর কম ছিল হাকালুকি হাওরের পানি। কিন্তু এরই মধ্যে আবারও বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। সেই ঝড়ের সাথে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। ধান পঁচে পানি দূষিত হয়ে গত ২-৩ দিন থেকে ব্যাপক হারে মাছে মড়ক লেগেছে। এতে ধান আর পচা মাছের দুর্গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে হাওরের বাতাস।
কৃষক আর হতদরিদ্রের বুকে হতাশার আরেক ধাক্কা দিয়েছে হাঁসের মড়ক। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে মরা মাছ ও পোকা খেয়ে মরছে পোষা হাঁস। ইতোমধ্যে সহস্রাধিক হাঁস মারা গেছে দাবি খামার মালিকদের। এদিকে হাকালুকিতে মাছ মড়ক বন্ধে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে ছিটানো হচ্ছে চুন ও ঔষধ।
কৃষকরা জানান, গত ১৫ এপ্রিল শনিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ের পর বাতাসের সঙ্গে ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে হাওরের মাছ মরতে দেখা যায়। সেই মাছ খেয়ে এখন মারা যাচ্ছে আমাদের পালিত হাঁস। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের কিনারায় পানিতে ভাসতে দেখা গেছে মরা হাঁস, আর তা কুঁড়িয়ে আনছেন খামারিরা।
হাকালুকি পাড়ের বাসিন্দা কৃষক আবুল হোসেন, মলিক মিয়া ও সবু মিয়ারা বলেন, পানিতে ধান নিয়েছে। অভাবের সংসার হাঁসের ডিম বিক্রি করে চালাতেন। হাঁস মরে যাওয়ায় এনজিও থেকে তোলা ঋণ কিভাবে শোধ করবো?
হাকালুকি হাওর পাড়ের উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের মো. রফিক মিয়া, আজাদ মিয়া, জামাল মিয়া, সুলেমান মিয়া, ফারুক মিয়া বলেন, হাওরে হাঁস নামলে মাছ ও পোকা খেয়ে একের পর এক হাঁস মারা যাচ্ছে।
কৃষি ক্ষেতের পাশাপাশি এনজিও থেকে উত্তোলিত ঋণের টাকায় হাঁস কিনে ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতেন তারা। এনজিও থেকে তোলা সেই ঋণ এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন হাকালুকি হাওরে চুন ও ঔষধ ছিটানো হয়েছে। শুধুমাত্র সোমবার বিকেলে ও মঙ্গলবার সারাদিনে ৩ হাজার ৩শ' কেজি চুন এবং সাথে ঔষধ ছিটানো হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাকালুকি হাওরের চকিয়া, ফুটবিল, গৌড়কুড়ি ও কাংলি বিলে চুন ও ঔষধ ছিটানো হয়। চুন ও জিওলাইট ঔষধ ছিটানোর পর পানির রং পরিবর্তন হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, বন্যার কারণে পানিতে ডুবে যাওয়া ধান পঁচে গিয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানির পুরোপুরি অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত মরা মাছ খেয়ে হাঁসও মারা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের বা হাঁসের খামারিদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি আরও জানান, দেশের বৃহত্তম এই হাওরে যে পরিমান চুন ও ঔষধ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। তবে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না দুর্যোগ কাটছে এবং অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/২০ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব