চট্টগ্রামে এবার গৃহকর নিয়েও এক হলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এর আগে রাজনীতির অঙ্গনে উত্তাপ ছড়ানো পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগারের পর নগর আওয়ামী লীগের এই দুই শীর্ষ নেতা এক মঞ্চে উঠে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করার ঘোষণা দেন।
জানা যায়, গত ১ মে সোমবার নগরের লালদীঘি মাঠে জাতীয় শ্রমিকলীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং প্রধান বক্তা ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, হোল্ডিং টেক্স নিয়ে আমি কিছু কথা বলেছিলাম। এর সুরাহা চাই। এ জন্য আমি আর মেয়র নাছির এক হয়ে চেষ্টা করব, বর্ধিত হোল্ডিং টেক্স যেটা আছে সেটি যাতে আর না বাড়ে। তাছাড়া মেয়র থাকাকালীন আমি কখনো গৃহকর বাড়াইনি।
তিনি বলেন, সরকারি থেকে বরাদ্দ হিসেবে বছরে ৩০ কোটি টাকার বেশি পেতাম না। তারপরও বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে সচল রেখেছিলাম। আশা করি বর্তমান মেয়রও আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করে চসিককে সচল রাখবেন। এ জন্যে আমি তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবো।
সভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই শ্রমিক দরদী জননেতা। স্বাধীনতার আগে থেকেই ছাত্র রাজনীতির পরপরই শ্রমিক রাজনীতি শুরু করেন। তাই শ্রমিক আন্দোলন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিশাল অভিজ্ঞতা রয়েছে। মহিউদ্দিন ভাইয়ের শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রামে ও অধিকার আদায়ে শ্রমজীবী জনতার মুক্তির সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করবো। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করব।’
জানা যায়, বন্দর, চসিকের করপুনর্মূল্যায়ন, খেলার মাঠে সুইমিংপুল নির্মাণ, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থানান্তরসহ নানা ইস্যুতে নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। গত ১০ মে নগরের লালদীঘি মাঠে মেয়র নাছিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন মহিউদ্দিন। একই দিন রামপুর ওয়ার্ডের বৈশাখী অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন আ জ ম নাছির। এরপর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে দুই নেতাই নগরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এক মঞ্চে হাতে হাত রেখে বক্তব্য দিয়ে দুই জনের মধ্যে কোন বিরোধ নেই বলে ঘোষণা দেন। গত ২৯ এপ্রিল নগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায়ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে দুই নেতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা ব্যক্ত করেন। গত ১ মে আবারো দুই নেতা এক মঞ্চেই উপস্থিত হয়ে পরস্পরকে উদ্দেশ্য করে ইতিবাচক কথা বলেন।
অভিযোগ আছে, মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির একই সংগঠনের একই শাখার গুরুত্বপূর্ণ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দুই নেতাই অধিকাংশ বৈঠকে একই সময়ে উপস্থিত থাকতেন না। ‘একজন গেলে আরেকজন আসতেন’ এমন নিয়মে চলে আসছিল।
তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, শীর্ষ দুই নেতা এক সঙ্গে কাজ করলে উজ্জীবিত হবেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে দল এবং সংগঠনও উপকৃত হবে। দুই নেতার এই ঐক্যবদ্ধতা যেন অটুট থাকে। তাঁদের ঐক্যের মাধ্যমে যেন চট্টগ্রামের উন্নয়ন সাধিত হয়।
বিডি প্রতিদিন/২ মে ২০১৭/হিমেল