বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর স্টাফ কোয়ার্টারের ৩ নম্বর পুকুর এবং এক কর্মচারীর বাসা থেকে রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমান ঔষধ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে ঔষধ উদ্ধারের সময় হাসপাতালের ঔষুধ চুরি করে বাসায় মজুদ করে রাখার অভিযোগে শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী শেফালী বেগম ও তার মাদকাসক্ত ছেলে মামুনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
কেতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবু তাহের জানান, শুক্রবার সকালে তারা কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের কাছ থেকে সেখানকার একটি পুুকুরে বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ ভাসছে বলে খবর পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর থেকে ঔষধগুলো উদ্ধার করেন। ঔষধের মোড়কের গায়ে লাল-সবুজ এবং সরকারি ছাপ থাকায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেগুলো সরকারি হাসপাতালের রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের ঔষধ।
জব্দকৃত ঔষধের কোনটি ২০১৮ এবং কোনটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে। উদ্ধার করা ঔষুধের মধ্যে রয়েছে সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশন, জেএমআই সিরিঞ্জ, ডেস্কামেটথাসন সোডিয়াম, লার্ব ৫০+, লুমনা-১০, ডমপেরিডন, ভ্যাসোপিস্ক, থিওফাইনিল, জ্যাসোকাইন জেল, ডাইক্লোফেন ইনজেকশন, এনক্লোগ প্লাস, সালবুটামল, এজিথ্রোমাইসিন ৫০০।
এসআই আবু তাহের জানান, স্থানীয়দের দেয়া তথ্যানুযায়ী কোয়ার্টারের বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী শেফালী আক্তারের ছেলে মামুন বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঔষধগুলো পুকুরে ফেলেছে। তার আগে বাসার সামনে কিছু ওষুধ আগুনে পুড়িয়ে ফেলে সে। এই তথ্যের ভিত্তিতে শেফালী আক্তারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে আরও কিছু সরকারি ঔষধ উদ্ধার করেন তারা। সরকারি ঔষধ মজুদ রাখার অভিযোগে হাপাতালের কর্মচারী শেফালী আক্তার ও তার ছেলে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, মামুন মাদকাসক্ত। গত দুই দিন ধরে মায়ের সঙ্গে তার ঝগড়া চলছে। মায়ের সঙ্গে রাগ করে মামুন বাসায় মজুদ থাকা কিছু ঔষধ পুকুরে ফেলে দেয় এবং কিছু ঔষধ আগুনে পুড়িয়েছে।
শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের সিনিয়র স্টোর অফিসার (মেডিসিন) ডা. মাহমুদ হাসান জানান, উদ্ধার হওয়া ঔষধগুলো সরকারি। এর মূল্য লক্ষাধিক টাকা। ঔষধগুলো শেবাচিম হাসপাতালের রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত কিনা তা কাগজপত্র না দেখে বলা যাচ্ছেনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্টোরের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
মেডিকেলের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের কোন ঔষধ চুরি হয়নি। তবে ওষুধগুলো কোথা থেকে কিভাবে এসেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, শেফালী আক্তার হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে আয়া পদে কর্মরত। স্টোর থেকে আন্তঃওয়ার্ডে পাঠানো ঔষধ রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে কর্মচারীরা বাসায় নিয়ে যায়। পরে সেগুলো বিক্রি করে দেয় কর্মচারীরা। প্রতিটি ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগে শেফালী আক্তার ঔষধ পাঁচারের অভিযোগে র্যাবের হাতেও আটক হয়েছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/১২ মে ২০১৭/হিমেল