ঢাকার অদূরের সাভারের আশুলিয়ায় সোর্সের সাথে বাকবিতণ্ডার জের ধরে আমিনুল (২৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে আটকের পর টাকা না পেয়ে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের হাতে আটক ব্যবসায়ীর বাবা সাবেক ইউপি সদস্য সফুরউদ্দিন এ অভিযোগ করেন। জানা গেছে, ওই ব্যবসায়ীকে আটক করার সময় এবং মামলায় উল্লেখ করা সময়ের সাথেও কোন মিল নেই। এছাড়াও ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তাকে আদালতে না পাঠিয়ে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) আব্দুল আজিজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ওই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এসময় ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবির কথা বলতে তিনি তা অস্বীকার করেন। এরপর আটকের সময় ও মামলায় উল্লেখ করা সময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ীর বাবা ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সফুরউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তার ছোট ছেলে পাপু উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের ছাত্র। বুধবার রাতে কলেজ থেকে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের বুড়িপাড়া এলাকায় তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত নয়টার দিকে সে বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালে আশুলিয়া থানা পুলিশের সোর্স রাজীবের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দু'জনের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয়দের তোপের মুখে ওই সোর্স ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। এর কিছু সময় পরই আশুলিয়া থানার এস আই আজিজকে সাথে নিয়ে তিনি আবারও ঘটনাস্থলে গিয়ে কলেজ ছাত্রের বাবা সাবেক ইউপি সদস্য সফুরউদ্দিনকে আটকের চেষ্টা করে। এসময় আবারও স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে সাবেক ইউপি সদস্যের বড় ছেলে আমিনুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপরই তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সোর্স আজিজের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। না হলে মাদক মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেন।
ব্যবসায়ীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের সোর্স রাজিব তার কাছে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি বলেন, তার ছেলে কোন অন্যায় করেনি। বিনা কারণে তাকে আটক করা হয়েছে। এ কারণে তিনি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের সোর্স আজিজের সাথে সাবেক ইউপি সদস্যের দুই ছেলে বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে সোর্স আমিনুলকে তাদের বাড়ির সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়। আমিনুল ব্যবসায়িক কাজে টাঙ্গাইলে থাকেন। কয়েকদিন আগে বাড়িতে এসেছেন। সোর্স রাজীব তার প্রভাব দেখানোর জন্য এস আই আজিজকে দিয়ে মিথ্যে মাদক মামলা দায়ের করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
তবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) আব্দুল আজিজ বলেন, আমিনুলের দেহ তল্লাশী চালিয়ে বুধবার ১০টায় ৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে একজন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর আদালতে না পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় থানা হাজতে রাখা সম্পর্কে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আওয়ালের কাজে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি সারাদিন থানার বাইরে ছিলেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানানো হচ্ছে।
তবে এ ব্যাপারে সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি কোন পুলিশ সদস্য অন্যায়ভাবে এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/২০ অক্টোবর, ২০১৭/মাহবুব