বাংলাদেশে একটি হাসপাতালে ১২০০ টাকা বেতনে কাজ করতেন ময়না বেগম। হাসপাতালে চাকরির কথা বলে সৌদি আরবে ভালো বেতনে কাজের জন্য পাঠানো হয় তাকে।
কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে একটি বাড়িতে কাজের জন্য নেওয়া হয় এবং শিকার হতে হয় যৌন নির্যাতনের। ‘প্রথমে আমাকে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে নিতে আসেন দুই পুরুষ। দেখে ভয় পাই। পরে ওই বাড়িতে ঢুকে যখন এক মহিলা দেখি তখন মনে সাহস আসে। কিন্তু রাতে গোসল করায়ে আমারে পাতলা ফিনফিনে কাপড় পরতে দেয়, সেটা আমি পরতে না চাইলে মারধর শুরু করে। এরপর আমার ঘরে প্রথমে আসে ছেলে, পরে আসে বাপ। তারপর আমারে জড়ায়ে ধরে নির্যাতন করে। বাধা দিতে গেলে আমারে মাইরা-ধইরা, কামড়াইয়া-চিমড়াইয়া কিছু রাখে নাই। ’ গতকাল ঢাকায় এক গণশুনানিতে নিজের ওপর সৌদি আরবে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথাগুলো বলছিলেন ময়না বেগম।
লাল কাপড় দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন তিনি, ‘নয় মাস এমন নির্যাতনের ফলে আমার প্রজনন অঙ্গে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তাতে এখনো চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার স্বামী নাই। স্বামী থাকলে আমারে ঘরে উঠাইত না। অনেক কষ্টে ছেলেরে নিয়া আছি। ’ সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য যাওয়া নারীরা কেমন আছেন— এই বিষয়ে আয়োজিত এক গণশুনানিতে এভাবেই আরও অনেক ফিরে আসা নারী শ্রমিক যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
বেসরকারি সংগঠন ওয়ান-বিলিয়ন রাইজিং বাংলাদেশ নামে একটি উদ্যোগের আয়োজনে এই গণশুনানিতে নারী শ্রমিকদের কথা শোনেন বাংলাদেশের কয়েকজন সাবেক বিচারপতি, মানবাধিকার কর্মী, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকনেতা।
এ অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছাড়া নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে বিরোধিতা জানিয়েছেন শ্রমিকনেতা, মানবাধিকার কর্মী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের ওপর বিদেশে নির্যাতনের বিষয়ে সরকারের আরও জোরালো পদক্ষেপের দাবি উঠে আসে।
অভিবাসী বা পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান সালমা আলী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই শারীরিক-মানসিক সব ধরনের নির্যাতনের শিকার। অনেক শ্রমিক সেখানে নির্যাতনের মুখে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।’
গণশুনানিতে প্রদান করা তথ্যানুসারে, ১৯৯১ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৪ হাজার নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গেছেন।