আশুলিয়ায় গণধর্ষণের পর সড়কের ওপর ফেলে যাওয়া এক কিশোরী পোশাক শ্রমিককে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয় কয়েক যুবক। এমনকি এ ঘটনায় কথিত প্রেমিক ও ধর্ষণকারী রাসেলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেও তারা।
কিন্তু এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর আশুলিয়া থানা পুলিশ সেই দুই যুবককে ডেকে নিয়ে এসে আটকের পর রবিবার দুপুরে আদালতে পাঠায়। হতভাগা সেই দুই যুবকের নাম ইমরান (২৬) ও সোহাগ (১৭)। তারা জামগড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
মামলার বাদী ও ধর্ষিতা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বখাটে রাসেল ও তার বন্ধুরা মেয়েটিকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর তাকে অচেতন অবেস্থায় স্থানীয় একটি সড়কে ফেলে রেখে যায় তারা। পরে স্থানীয় ইমরান ও সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ধর্ষিতা সেই নারী পোশাক শ্রমিক আক্ষেপের সাথে আরও বলেন, প্রতিবেশী ইমরান ও সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে উদ্ধার না করে হাসপাতালে ভর্তি করলে হয়তো তাকে অচেতন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যু বরন করতে হতো। তার পরিবার তার সন্ধান পেতো কিনা সে নিয়েও তিনি সন্দেহ পোষন করেন।
তবে সেই যুবকদের আটক করার পর তিনি ও তার মা থানায় এসে বিষয়টি আশুলিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) ওবায়দুর রহমানকে বললেও তাদেরকে ছাড়েনি পুলিশ। তবে কথিত প্রেমিক ও ধর্ষককে আটকের পর পুলিশের সোপর্দ করে দেওয়ার কারনে সেই বখাটে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সেই দুই যুবককে ফাঁসিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ধর্ষিতার পরিবার।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি ইন্টিলিজেন্স)) ওবায়দুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার প্রধান আসামী ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ কারনেই সেই দুই যুবককে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এখানে ধর্ষিতা পরিবার এ ঘটনায় তারা জড়িত নেই দাবী করলেও পুলিশের কিছুই করার নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে আটক হওয়া যুবক ইমরানের মা লাল বানু ও সোহাগের মা রেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তাদের ছেলেরা নির্দোষ। ধর্ষনের পর ওই কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইমরান ও সোহাগ কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
দুই যুবকের পরিবার অভিযোগ করে আরও বলেন, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত না করেই তাদের সন্তানদের বিনা অপরাধে থানায় আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এছাড়াও ধর্ষনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে ওই দুই যুবক পালিয়ে বেড়াত। অথচ পুলিশ তাদেরকে ডেকে এনে থানায় আটক করে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ঢাকা জেলাার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানার কর্মীকে কৌশলে তার কথিত প্রেমিক রাসেল মিয়া গত ১২ জানুয়ারী শুক্রবার বিকেল জিরানী এলাকায় নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষন করে সড়কের উপর ফেলে রেখে যায়। পরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের জিরানী এলাকায় অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয় কয়েক যুবক থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে নারী শ্রমিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ধর্ষক প্রেমিক রাসেলকে আটক করেন। এ ঘটনার পরের দিন ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর