মালিবাগের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকৎসাধীন বিরল রোগ ‘ওয়াইল্ড সিন্ড্রোম’ আক্রান্ত মাদারীপুরের ১৩ বছরের কিশোর আব্বাস শেখের চিকিৎসায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা সহযোগীতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সোমবার সকাল নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ২য় তলায় ‘ক্যাপাসিটি ইনহ্যান্সমেন্ট ফর বার্নস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সি জ্যাক চং এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাবরীনা ইয়াসমীনের নেতৃত্বে একটি টিম আব্বাস শেখকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বায়ক ডা. সামন্ত লালের কাছে যান। ডা. সামন্ত লাল নয়টায় ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘ওয়াইল্ড সিন্ড্রোম’ রোগে আক্রান্ত আব্বাস শেখের চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি সেমিনার হয়। এ সেমিনারে সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাবরীনা ইয়াসমীনের তত্ত্বাবধানে আব্বাসের চিকিৎসা, আব্বাস শেখের রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়াবলি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেড সনাক্ত করেছে তা সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌহিদা নূর উপস্থাপন করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. নয়াজেশ আলী খান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সি জ্যাক চং, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. লীই প্যাংক, ডা. সামন্ত লাল সেন ও ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাবরীনা ইয়াসমীন তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। তারা সকলেই আব্বাস যে ‘ওয়াইল্ড সিন্ড্রোম’ আক্রান্ত তাতে সহমত পোষণ করেন।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সি জ্যাক চং বলেন, এ পর্যন্ত আব্বাস শেখকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেড যে চিকিৎসা দিয়েছে তা সঠিক ও কার্যকরী। তিনি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের বিশেষ করে মেডিসিন ও প্যাথলজি বিভাগের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আব্বাস শেখ ‘ওয়াল্ড সিন্ড্রোম’ রোগে আক্রান্ত তাতে সহমত পোষণ করেন।
তিনি বলেন, ওয়াইল্ড সিন্ড্রোম রোগটি যে বিরল তাতে কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীতে হাতে গোনা তিন থেকে চারটি কেস স্টাডি রয়েছে। ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেড ও আব্বাস শেখের অভিভাবক যদি চায় তবে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই রোগীর চিকিৎসা সহযোগীতা প্রদান করবে।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. লীই প্যাংক বলেন, আব্বাসকে অপারেশন করতে হলে তার শারীরিক অবস্থা উন্নত করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আব্বাসের শরীরের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের উপস্থিত রয়েছে। তবে তা কোন প্রজাতির তা সনাক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইনিস্টিউট অব ইপিডেমাইলোজি ডিসেস কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চের ( আইডিসিআর) সহযোগী নেওয়া যেতে পারে। আব্বাসের পা রিকন্সট্রাকটিভ করা যাবে যদি তার অভিভাবক বা পিতা চায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিটের তত্ত্বাবধানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সহযোগীতায় করা যেতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বায়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আব্বাসকে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব নয়। তবে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ আব্বাসকে এ পর্যন্ত যে চিকিৎসা দিয়ে তা সঠিক। আব্বাসকে বেশ কয়েকটি ধাপে অপারেশন করতে হবে। আব্বাসকে ধাপে ধাপে অপারেশন করা গেলে তার স্বাভাবিক জীবন যাপন উন্নত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি বিরল রোগে আক্রান্ত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আব্বাস শেখকে নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির চিফ ইক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজের নজরে আসে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. রুবাইত ইসলাম মন্টির পরামর্শে আব্বাসকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসার দায়িত্ব ভার নেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে আব্বাস শেখ ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে অ্যান্ড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল (অব:) অধ্যাপক ডা. এমএ বাকীর অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ১৮ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাবরীনা ইয়াসমীন, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম খোদেজা নাহার বেগম ও ডার্মাটো লজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌহিদা নূরের টিম আব্বাস শেখ বিরল রোগ ‘ওয়াইল্ড সিন্ড্রোম’ সনাক্ত করতে সমর্থ হন।
এদিকে ১ এপ্রিল আব্বাসের চিকিৎসা গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সভা শেষ বোর্ড সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খোন্দকার সাংবাদিকদের কাছে মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেডে চিকিৎসাধীন মাদারীপুরের তের (১৩) বছরের কিশোর আব্বাস শেখ ‘উয়াইল্ড সিন্ড্রম (WILD SYNDROME – Wart, Immuno, Deficiency, Lymphodema, Ano-genital Dysplsia)’ রোগে আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেন।
সেমিনারে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের আরো পাঁচজন চিকিৎসকের পাশাপাশি বিশ জনের মত চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন