ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে বরিশালগামী দিবাকালীন একমাত্র নৌ সার্ভিসের এমভি গ্রীন লাইন-২ জাহাজের সাথে অপর একটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর বৃহস্পতি এবং শুক্রবার বরিশাল-ঢাকা রুটে গ্রীন লাইনের সকল যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। জাহাজ সংস্কার শেষে আগামী শনিবার থেকে যথারীতি বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ফের গ্রীন লাইন সার্ভিস যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে বরিশালগামী দিবাকালীন একমাত্র নৌ সার্ভিসের এমভি গ্রীন লাইন-২ জাহাজের সাথে অপর একটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বুড়িগঙ্গা সেতুর আগে বুড়িগঙ্গা নদীতে এই দুর্ঘটনায় গ্রীন লাইনের বামপাশে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনায় কয়েকজন সামান্য আহত হলেও কোন প্রাণহানি হয়নি। তবে দুর্ঘটনার পর সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রীন লাইন জাহাজটির যাত্রা বাতিল করে ফের ঢাকার লালকুটির ঘাটে গিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে টিকেটের টাকা ফেরত দেয় কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার জন্য শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী এমভি মীর সাব্বির নামে ওই লঞ্চটিকে দায়ী করেছেন গ্রীন লাইনের বিপদে পড়া যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা।
গ্রীন লাইনের যাত্রী বরিশালের ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন কবির জানান, ঢাকার লালকুটির ঘাট থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে ৭শ’ আসন বিশিষ্ট গ্রীন লাইন ২ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। বুড়িগঙ্গা নদীর বুড়িগঙ্গা সেতু অতিক্রমের আগেই দ্রুতগতির গ্রীন লাইন হঠাৎ গতি কমিয়ে দেয়। এ সময় দেখতে পান শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি মীর সাব্বির এমভি গ্রীন লাইন-২ এর বামপাশের মাঝ বরাবর সজোরে আঘাত করে। এতে বিকট শব্দে গ্রীন লাইনে জোরে ঝাঁকি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে যাত্রীদের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। সংঘর্ষে গ্রীন লাইনের নীচ তলার বামপাশের অন্তত ৮ জন যাত্রী রক্তাক্ত জখম হয়। ভেঙে যায় ৪/৫টি আসন।
গ্রীন লাইনের নীচ তলার প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী মো. রাজু জানান, শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী ওই জাহাজটি প্রথমে ডান পাশ থেকে অতিক্রম করতে চাইলেও শেষ সময়ে বামপাশ থেকে অতিক্রম করতে থাকে। এ সময় গ্রীন লাইনের গতি হঠাৎ কমিয়ে দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। মুহূর্তের মধ্যে ওই লঞ্চটি গ্রীন লাইনের বামপাশে সজোরে আঘাত হানে।
আবুল হোসেন নামে একজন যাত্রী জানান, জরুরি কাজে বরিশাল যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ঘটনার পর গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করে যাত্রা বাতিল করে লালকুটির ঘাটে ফিরে দিয়ে যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরৎ দিয়ে দেয়। এতে তিনিসহ অনেক যাত্রীই বিপদে পড়েন। বৃহস্পতিবার হওয়ায় এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী বরিশাল যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েন বলে তিনি জানান।
গ্রীন লাইন সার্ভিসের বরিশাল অফিসের ইনচার্জ শামসুল আরেফিন লিপটন বলেন, সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রত গ্রীন লাইনের বামপাশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি মেরামত এবং সার্ভে ছাড়া রুটে পাঠানোর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোম্পানীর নিজস্ব ডকইয়ার্ডে গ্রীন লাইন-৩ নামে আরেকটি জাহাজের সংস্কার কাজ চলছে। বিকল্প কোন জাহাজ না থাকায় বৃহস্পতিবার গ্রীন লাইনের ওই লঞ্চের যাত্রা বাতিল করে যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। রুটে চলাচল করা একমাত্র জাহাজটি দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ায় বৃহস্পতি এবং শুক্রবার বরিশাল-ঢাকা রুটে গ্রীন লাইনের সকল যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। গ্রীন লাইন-৩ জাহাজ সংস্কার শেষে আগামী শনিবার থেকে যথারীতি বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ফের গ্রীন লাইন সার্ভিস যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে জানান বরিশাল অফিস ইনচার্জ লিপটন। দুর্ঘটনাকবলিত গ্রীন লাইন-২ মেরামত শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে ফের রুটে যুক্ত হতে পারবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা নৌ পুলিশ সুপার একেএম এহসানউল্লাহ জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
বিডি-প্রতিদিন/১০ মে, ২০১৮/মাহবুব