রাজধানীর পল্লবীর একটি মাদ্রাসা থেকে সাজমিন আক্তার (১৩) নামে এক ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট সে নিখোঁজ হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, মেয়েটিকে জ্বিনে নিয়ে গেছে। মেয়েটির পরিবার বলছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের মেয়েকে গুম করেছে।
আজ বুধবার সকালে মেয়ের সন্ধান চেয়ে বাবা মো. শরিফ উল্লাহএবং মা শিল্পী আক্তার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় তারা একমাত্র মেয়েকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাজমিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, গত চার বছর ধরে আমার মেয়ে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ জামিয়া ফোরকানিয়া তালিমিয়া মহিলা মাদ্রাসায় পড়ছে। সে খুছুছি জামায়াত বা ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ২৭ আগস্ট তাকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসি। ৩১ আগস্ট মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ফোন করে জানায়, সাজমিনকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমি মাদ্রাসায় গিলে নিরাপত্তাকর্মী বলে, আপনার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমি মাদ্রাসার হুজুর ও আপাকে ফোন দেই। তারা একেক সময় একেক কথা বলছেন।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলে, গেটে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সাজমিন আর আসেনি। আবার জানায়, আমার মেয়ের সঙ্গে জ্বিন আছে। তাকে জ্বিনে নিয়ে গেছে। আবার বলে সে অসুস্থ। মাথা ঘুরে সিঁড়িতে পড়ে গেছে। এভাবে তারা একেকবার একেক তথ্য দিচ্ছেন। কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছে না। পরে এ বিষয়ে ১ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় একটি জিডি করি। কিন্তু পুলিশ আজ পর্যন্ত মেয়েটির সন্ধান দিতে পারেনি। এর মধ্যে কয়েকটি নম্বর থেকে পুলিশ পরিচয়ে আমার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে।
সাজমিনের বাবা মো. শরিফ উল্লাহ বলেন, মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বলে মেয়েকে সেখানে পড়তে দিয়েছি। আমরা দেখা করতে গেলেও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। মাদ্রাসায় সিসিটিভি রয়েছে। নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। রয়েছে শিক্ষকদের নজরদারী। সেখান থেকে অনুমতি ছাড়া কেউ বের হতে পারে না। এমনকি বাবা-মা ছাড়া কারো সঙ্গে দেখাও করতে দেয় না। এত কিছুর পরও আমার মেয়ে কিভাবে নিখোঁজ হয়। সাজমিন আমাদের একমাত্র মেয়ে। আমরা তাকে ফেরত চাই।
জানা গেছে, মিরপুর-১ নম্বর শাহ আলী বাগের ১ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন সাজমিন আক্তার। চার বছর আগে তাকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। সাজমিনের বাবা মো. শরিফ উল্লাহ ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এবং মা শিল্পী আক্তার একজন গার্মেন্টস কর্মী। তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাটে। সাজমিন গ্রামের বাড়িতে প্রাইমারী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়াও করেছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনার পর মেয়েটিকে উদ্ধারে কাজ করছি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বাচ্চাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। আমরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। তবে এখনও তেমন কোনও আপডেট নেই।
বিডি প্রতিদিন/ মাহবুব-তাফসীর আব্দুল্লাহ
