১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:৪৭

দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় দুর্নীতিতে মহামারি: মওদুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় দুর্নীতিতে মহামারি: মওদুদ

ফাইল ছবি

দেশে নির্বাচিত সরকার নেই বলে সর্বস্তরের দুর্নীতি ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আজ সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে দুর্নীতির ব্যাপকতা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘একটা পিয়নের চাকুরির জন্য সরকারি অথবা আধা সরকারি যেকোনো সংস্থায় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও যেকোনো চাকুরির জন্য টাকা দিতে হয়। একজন পিয়নের জন্য ৩ লাখ টাকা, একজন নার্সের ৫ লাখ টাকা এমনকি টিআইবির যে রিপোর্ট বেরিয়েছে শুনলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার নিয়োগের জন্য ব্রাউন ইনভেলাপ অর্থাৎ টাকার খাম লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে নির্ধারণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ এমন  কোনো জায়গা নাই যেখানে বাণিজ্য নাই, ঘুষ ও অন্যায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা নাই।  দেশে নির্বাচিত সরকার নাই বলে দেশের সর্বস্তরে আজ দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। আমি বলব, আজকে দুর্নীতি সর্বকালের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই সরকারের সময়ে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (এইবি) উদ্যোগে বিএনপি  চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, কাদের গনি  চৌধুরী, শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের আবদুস সালাম, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের দৈনিক নাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এসব কাদের টাকা? জনগণের টাকা। কারা এটা ভোগ করছেন যারা এসব লুট করছেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, যারা ব্ল্যাক মার্কিটিং করেছেন, স্মাগলিং করেছেন এবং অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন তাদেরই টাকা বিদেশে পা্ঠেিয় দেয়া হচ্ছে আইন লঙ্ঘন করে।’

ছাত্রলীগ-যুব লীগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি ‘আজকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ গত ১০ বছর বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে নির্যাতন করেছে,  যে চাঁদাবাজী করেছে, যে টেন্ডারবাজী করেছেন, আজকে তাদের মুখোশ খুলে গেছে। আজকে বিরোধী দল নাই। তবে এমন অবস্থা হয়েছে যে, সরকার বাধ্য হয়ে ছাত্র লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ করতে বাধ্য হয়েছে। কেন? টাকার জন্য, ঘুষের জন্য, দুর্নীতির জন্য। একটা তালিকা তারা বের করেছেন যে, ৫শ' ছাত্রলীগের কর্মী-নেতা চাঁদাবাজি করে, চাঁদাবাজির একটা তালিকা বের করেছে-এটা ৫শ' না ৫ হাজার হবে অথবা তার চাইতেও বেশি হবে।’

সাবেক এই আইনমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সরকার তাহলে কী বুঝাতে চাচ্ছেন? তারা পরিস্কারভাবে বাংলাদেশের মানুষকে বলছেন যে, এই ছাত্রলীগ, এই যুবলীগ এরা টেন্ডারবাজি করে, চাঁদাবাজি করে, এরা মানুষের ওপর অত্যাচার করে, এরা জমি দখল করে, এরা দোকান দখল করে, এরা মানুষের ওপর অত্যাচার করে টাকা নেয়, মানুষকে গুম করে টাকা নেয়-এই ধরনের কথাই তো আজকে তারা প্রমাণ করেছে।’

রোহিঙ্গা সমস্যা ও আসামের নাগরিকপুঞ্জির বিষয়ে সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারনে বাংলাদেশ একটি বিরাট সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। একটা হলো রোহিঙ্গা সংকট। এটা এই সরকারের সৃষ্টি। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে তারা দায়ী। তাদের কুটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে অবস্থান করা ১১ লাখ রোহিঙ্গার একজনকেও তারা মিয়ানমারে পাঠাতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি নতজানু সরকার বলে কখনোই রোহিঙ্গা ও আসামের নাগরিকপুঞ্জির বিষয়ে কখনোই সফল হতে পারবে না। তার কারণ তারা (সরকার) দুর্বল, তাদের শক্তি নাই, জনগনের সমর্থন তাদের নাই বলে তারা জোর গলায় এসব ইস্যু বিষয়ে সমাধান করতে পারবেন না।’

খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়া হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তির জন্য চেষ্টা করছি, করে যাবো। কিন্তু এর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তার মুক্তি হবে রাজপথে।’

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর