নরসিংদীর মনোহরদীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেমের পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন। তবে বিলম্বে পুলিশ পৌঁছার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জেলা পুলিশ। একই সাথে দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেছেন জেলা পুলিশ।
জানা গেছে, নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া গ্রামের আবুল হাশেম রবিবার বিকাল ৪টায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে মনোহরদী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউর রহমান বিষয়টি মনোহরদী থানা পুলিশকে জানান। আজ সোমবার সকাল দশটায় মরহুমের জানাজার সময় নির্ধারণ করে পরিবার। পরে থানার পরামর্শে জানাজার সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে ১১টা করা হয়। পুলিশ না আসায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই একাত্তরের এই বীর সেনানীকে দাফন করা হয়। এসময় মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে দু’জন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময় ১১টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ না আসায় পুলিশকে আবারও ফোন করে হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- তারা কাছাকাছি চলে এসেছেন। এরপর আরও ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে বেলা সাড়ে ১১টায় নামাজে জানাজা শেষে আবুল হাসেমকে দাফন করা হয়। এরপর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে সেখানে উপস্থিত হয় মনোহরদী থানা পুলিশের টিম। মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এই অবেহলার ঘটনায় এলাকায় তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
মনোহরদী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউর রহমান জানান, বারবার থানায় ফোন করার পরও পুলিশের এমন আচরণ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার শামিল। রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী, জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে, বিউগলে করুণ সুর বাজিয়ে রাষ্ট্রীয় সালাম ও এক মিনিট নিরবতা পালন করার কথা।
চরমান্দালীয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. শহিদুল্লাহ জানান, ‘শুধুমাত্র পুলিশের অবহেলার কারণেই একজন মুক্তিযোদ্ধা তার প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মানটুকু পেলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা হয়ে থাকলো। আমরা খুবই মর্মাহত ও লজ্জিত।’ এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার মোবাইলে কল দেওযার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শফিউর রহমানের সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ যথা সময়ে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বিলম্ব হয়েছে।
তিনি বলেন ‘মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় পুলিশের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেখাতে না পারা মিস কমিউনিকেশনের কারণে ঘটেছে। সবকিছু শুনে আমি মনোহরদী থানার ওসিকে মরহুম মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছি। ওসি গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।’
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু সাংবাদিকদের বলেন, বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে না পারা খুবই দুঃখজনক।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক