রাজশাহীর পদ্মানদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় শনিবার আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত উদ্ধার হওয়ারা হলেন মনি বেগম (৪৫), রতন ও এখলাস উদ্দিন। মনি বেগম নিখোঁজ কনের চাচী। এনিয়ে রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ালো।
এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ আছেন আরও ছয়জন। নিখোঁজদের খুঁজতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে চারটি উদ্ধারকারী ইউনিট। এর মধ্যে রাজশাহী সদর ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি রংপুর থেকে আসা একটি, বিআইডব্লিউটির একটি এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি ইউনিট নদীতে কাজ করছে।
নৌকাডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য এরই মধ্যে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলামকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলে। পরে মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযান সাময়িক স্থগিত করা হয়। শনিবার সকাল থেকে মোট চারটি ইউনিট আবার উদ্ধার অভিযানে নামে। এর মধ্যে রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্তে পদ্মা নদী থেকে বোরকা পরা অবস্থায় মধ্যবয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে বিজিবির টহল দল। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থল থেকে এখলাস (৩৬) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। দুপুরে উদ্ধার করা হয় রতন নামের আরেকজনের মরদেহ।
রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় ২৪ জন নিখোঁজ ছিলেন। তবে রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছেন আরও ১৭ জন। তাই এখন সাতজন নিখোঁজ আছেন।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। রাজশাহী, রংপুর ও বিআইডব্লিউটির তিনটি ইউনিট এবং বিজিবির একটি ইউনিট যৌথভাবে পদ্মায় উদ্ধার অভিযান চালায়। বর্তমানে উজানের ৫০০ মিটার গভীরে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। দুপুরে ভাটির ৫০০ মিটারে অনুসন্ধান চলবে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ পানিতে ডুবলে সাধারণত ৩৬ ঘণ্টা পর ভেসে উঠতে শুরু করে। এজন্য নৌ পুলিশ, মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকা থেকে শুরু করে পদ্মাপাড় ঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে থাকা চারঘাট উপজেলা পর্যন্ত নিখোঁজদের খোঁজে টহল দিচ্ছেন।
এদিকে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিআইডব্লিউটি, পুলিশ, নৌ-পুলিশ থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে ওই কমিটিতে। কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক হামিদুল হক সাংবাদিকেদের এই তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে নিহতদের স্বজনদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তারপর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ