রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বর-কনেবাহী দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৬)। কিন্তু তলিয়ে গেছে তার স্ত্রী সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (১৬)। নৌকাডুবির ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও রুমন তার স্ত্রীর লাশটি পাননি। স্ত্রীর লাশের অপেক্ষায় রুমন এখনও নদীপাড়ে অপেক্ষা করছেন।
রুমন পদ্মা নদীর ওপারে রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড বয়। আর কনে পূর্ণিমা একই উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহিন আলীর মেয়ে। নবম শ্রেণি পড়ুয়া সুইটির সঙ্গে রুমনের বিয়ে হয়েছিল দেড় মাস আগে।
তখন অনুষ্ঠান করা হয়নি। বৃহস্পতিবার কনের বাড়িতে ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া কনেকে। সেদিন বরপক্ষের লোকজন কনেকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের বাড়ি। পরদিন শুক্রবার বরের বাড়িতে হয় বৌ-ভাত। প্রথা অনুযায়ী বর-কনেকে আনতে গিয়েছিলেন কনেপক্ষের স্বজনরা। ফেরার পথে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কনে পূর্ণিমাসহ নিখোঁজ রয়েছে আরও তিনজন।
একটি নৌকায় পূর্ণিমার সঙ্গে ছিলেন তার মামাতো বোন তারিকা খাতুন (১৮)। তিনি জানান, তাদের নৌকায় বর-কনেসহ অন্তত ২৮ জন ছিলেন। নৌকায় কনের বাবাও ছিলেন। ডুবে যাওয়ার সময় কনে পূর্ণিমা তার চাচি মনি খাতুনের পা ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। তখন বাবা শাহিন আলী তার মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নৌকার ইঞ্জিনের ফ্যানে তার পা কেটে যায়। ফলে তিনিও মেয়েকে তুলে আনতে পারেননি। এ নৌকার ভাসমান যাত্রীদের রশি ফেলে উদ্ধার করে বালুবাহী একটি ট্রলার। সে ট্রলারেই তুলে নেয়া হয় বর রুমনকে। কিন্তু পূর্ণিমা রশিও ধরতে পারেনি। তাই সে তলিয়ে যায়।
স্ত্রীর অপেক্ষায় শনিবার সকাল থেকেই রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মাপাড়ে বসে থাকতে দেখা যায় বর রুমনকে। বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নববধূর জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন রতন। বিকালেও তাকে নদীরধারে দেখা গেছে। নদীর দিকে তাকিয়ে বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন তিনি।
রুমন জানান, পূর্ণিমা তার বোনের সঙ্গে নৌকার পেছনের অংশে বসে ছিল। আমি ছিলাম বন্ধুর সাথে, সামনে। একটু দূরত্ব ছিলো। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে এই পদ্মায় পাড়ি দিতে দিতেই বড় হয়েছি। কিন্তু এই পদ্মায় এতো ব্যথা দিবে বুঝিনি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার