টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্টের অভ্যন্তরের অধিকাংশ রাস্তা। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ডিএনডিবাসী। অনেক নিচু এলাকায় পানির পরিমাণ অনেক বেশি।
বৃষ্টির সাথে মঙ্গলবার দুপুরে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ পানি হাউজের পাম্প চালাতে পারেনি পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ। এতে পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। ফলে ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পায়। সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ পাম্প হাউজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রাসাদ বাছার জানান, মঙ্গলবার দুপরে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয় আমাদের ডিএনডি পাম্প হাউজে। তিনি বলেন, বর্তমানে ৩০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৬টি ও ৪০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি ও ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন বড় ৩ টি পাম্প দ্বারা আমরা পানি নিষ্কাশন করতে পারছি। এছাড়াও ১৯৫ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষশতাসম্পন্ন দুইটি পাম্পদ্বারা সেনাবাহিনী পানি নিষ্কাশন করছে। তবে ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাম্প নষ্ট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি। পাম্পটি মেরামত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, পানি টানার নিষ্কাশনের পরিমাণের চাইতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আমরা পানি নিষ্কাশন করে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। ফলে ডিএনডির রাস্তাগুলো তলিয়ে গেছে।
দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে এবং ডিএনডিকে বাসোপযোগী করতে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য দ্রুত ছাড় করতে হবে অর্থ। বিলম্বে অর্থ ছাড়ে প্রকল্পের বাজেট আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্ট। যার মধ্যে নারায়গঞ্জ-৪, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধিকাংশ (নাসিক ১নং ওয়ার্ড, ২নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ড, ৭নং ওয়ার্ড, ৮নং ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকা) ও ফতুল্লা থানার অংশ বিশেষ এলাকা রয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ডিএনডি প্রজেক্ট ছিল বন্যামুক্ত। এরপর থেকে ডিএনডি প্রজেক্টে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারা অপরিকল্পিতভাবে ডিএনডিতে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে ডিএনডিতে। ২০১৬ সালের ৯ আগষ্ট একনেকের সভায় ৫৫৮ কোটি টাকার ডিএনডির এক মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে চুক্তি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানালেন, প্রথমে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরবর্তীকালে এ ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। প্রকল্পের ভেতরের অবৈধ স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুত ও পানির লাইন অপসারণে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আরো ১৩’শ কোটি টাকা লাগবে। এ অর্থ বরাদ্দ না হলে ডিএনডিবাসীকে জলাবদ্ধ হয়েই বসবাস করতে হবে। তবে বরাদ্দ পেলে ডিএনডিকে বাসযোগ্য করার কাজ শুরু করবো।
এপ্রিল মাস থেকে ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা শুরু হওয়ার পর তা ভয়াবহ রূপ নেয় মধ্য জুনে। এখনও নিচু এলাকাগুলোতে পানি রয়েছে। যা দূর করতে হলে অচিরেই নতুন বরাদ্দ দিয়ে ডিএনডির মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা