বরিশাল মহানগর এবং বিভাগের ৬ জেলা উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধনকৃত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক-ল্যাব আছে ৯৬১টি। এর মধ্যে ২৯৭টির পুরোপুরি বৈধতা থাকলেও নানা অসঙ্গতির কারণে এখনও অনুমোদনহীন ৬৬৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক-ল্যাব।
এর বাইরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেনি (নিবন্ধনহীন) এমন হাজারো প্রতিষ্ঠানের হিসেব নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে। অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানে মৃত ডাক্তারের নামে পরীক্ষার রিপোর্ট, ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার ও নকল সামগ্রী ব্যবহার করে জনসাধারণের সাথে প্রতারনা চলছে প্রতিনিয়ত। মাঝে মধ্যে দুই একটা অভিযানেও টনক নরছে না তাদের। তবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের কঠোরতায় এবার আটঘাট বেঁধে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং এমনকি বিভাগের ৬ জেলা ৪০ উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ছাড়িয়ে বাজারঘাটেও ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক-ল্যাব। এদের অনেকের নেই রেজিস্টার্ড চিকিৎসক, ডিগ্রিধারী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। মৃত ডাক্তারের স্বাক্ষর ও নকল উপাদান ব্যবহার করে পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি এবং ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে পরীক্ষার নিরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে তারা। দীর্ঘদিন ধরে গেরে বসেছে এই অনিয়ম।
তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সম্প্রতি বরিশালেও অবৈধ স্বাস্থ্য সেবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন। মৃত ডাক্তারের নামে প্যাথলজি রিপোর্ট ইস্যু করায় গত ২২ জুলাই নগরীর জর্ডন রোডে বরিশাল দি সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিস ডায়াগনোস্টিক সেন্টার সিলগালা এবং অনিয়মের দায়ে ভুয়া ডিগ্রিধারী ডা. নুরে আলম সরোয়ার সৈকত এবং ডায়াগনস্টিকের দুই মালিক এ কে চৌধুরী ও জসিম উদ্দিন মিলন কাফিকে ৬ মাস করে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত ২৫ জুলাই নগরীর আগরপুর রোডর দি মুন মেডিকেল সার্ভিসেস নামে আরেকটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে রেজিস্টার্ড ডাক্তার না থাকলেও তার সিল-স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ায় ওই সেন্টারটি সিলগালা করে দেয়া হয়। একই সাথে সেন্টারের দুই মালিক যথাক্রমে হোসেন শাহিন ও শ্যামল মজুমদারকে ৬ মাস করে এবং দুই কর্মচারী ইব্রাহীম রানা ও শ্যাম সাহাকে ৩ মাস করে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দুটি অভিযানে নেতৃত্বদানকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা খাতে দীর্ঘদিন ধরে চরম অনিয়ম চলছে। সম্মিলিতভাবে এই অনিয়ম রুখে দিতে না পারলে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা চরমে ঝুঁকিতে পড়বে।
স্বাস্থ্য সেবার নামে প্রতারণা রোধে প্রশাসনের এই কঠোরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
উদীচী বরিশালের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, অননুমোদিত ক্লিনিক-ল্যাবের বিরুদ্ধে সারা বছর অভিযান হলে স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়তো এবং জনগণও হয়রানি থেকে রেহাই পেতো। নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এদের শিকর উপরে ফেলতে হবে। একই সাথে যারা লাইসেন্স পাবার যোগ্য তাদের লাইসেন্স দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, নিবন্ধনের (অনুমোদনের জন্য আবেদন করেনি) বাইরে থাকা হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক-ল্যাবের তালিকা করার জন্য মহানগরে সহকারী পরিচালককে এবং ৬ জেলায় সিভিল সার্জনদের প্রধান করে পৃথক কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির তালিকা পেলে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অবৈধ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধনকৃত ক্লিনিক-হাসপাতাল রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে ১১টি অনুমোদিত। একইভাবে সিটি এলাকায় নিবন্ধনকৃত ১১৬টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ২৮টি’র।
বরিশাল জেলায় নিবন্ধনকৃত ৫৩টি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধ্যে ২৭টি ও ১৪৬টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ৬২টি, ভোলা জেলায় ৩১টি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধ্যে ১২টি ও ৮৭টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের ৪৬টি, পটুয়াখালী জেলায় ৫৩টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ১২টি ও ১৬৭টি ডায়াগনোস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ৩০টি, বরগুনায় ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৮টি ও ৬০টি ডায়াগনোস্টিক ল্যাবের মধ্যে ১৮টি, পিরোজপুরে ৪৬টি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধে ১৫টি ও ৯৪টি ডায়াগনোস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ১৭টি এবং ঝালকাঠী জেলায় ১৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৩টি ও ৩১টি ডায়াগনোস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ৮টি নিবন্ধিত।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন