তিস্তা নদীতে বর্ষা মৌসুমে পানি বিপৎসীমা উঠা নামা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হেমন্তে তিস্তা এমন ভয়াল রূপ ধারণ করবে এটা কল্পনাও করতে পারেনি তিস্তাপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এমন পানি ঢল দেখেনি তিস্তাপাড়ের মানুষ।
উজানের নেমে আসা ঢলের পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়। জারি করা হয় সতর্কতা। তবে ভাগ্য ভাল মাত্র ১৮ ঘণ্টায় এই পানি কমে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বুধবার সকাল ৯টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৯৯০ সালে ডালিয়া ব্যারাজ নির্মাণ হওয়ার পরে এটাই সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধির রেকর্ড। তবে এই পানি বৃদ্ধি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আতঙ্ক কাটলে দুর্ভোগের ক্ষত রেখে গেছে এক রাতেই। তিস্তার প্রবল স্রোতে রংপুর-কাকিনা মহাসড়কের একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ বানের ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়াতেও দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি ও নদী ভাঙন। এই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১২ হাজারের বেশি মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এর মধ্যে গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে আছে। লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি ও শংকর, বাগেরহাট, কেল্লারহাটসহ বেশকিছু নিচু এলাকায় কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে আছে। পানিপ্রবাহ বেড়েছে শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর মহিপুর পয়েন্টে। এই পয়েন্ট থেকে অল্প দূরে সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদি বলেন, এক রাতে তিস্তার এমন রুদ্ররূপ আগে কখনো দেখা যায়নি। আতঙ্কে অনেকেই রাত জেগে ছিলেন। এসময় চরের অনেক মানুষ চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়ায় ক্ষেতের ফসল তিনটি ইউনিয়নের ধান, আলু, শাকসবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে পানি বেড়েছে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলেও। কাউনিয়ায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে ঢুসমারা, তালুকশাহাবাজ, পাঞ্জরভাঙ্গা, আজম খাঁ, হয়বৎ খাঁ, বিশ্বনাথসহ কয়েকটি গ্রামের পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষক আসাদুল জানান, আমি তিন একর জমি বত্রিশ হাজার টাকা প্রতি একর জমি লিজ নিয়ে আলু লাগিয়েছি সব স্রোতে ভেসে গেছে।
ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটাই তিস্তায় সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ। এর আগে কখনো বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেনি। তবে সান্ত্বনার কথা মাত্র ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টার মধ্যে পানি আবার বিপৎসীমার অনেক নিচে চলে এসেছে। তিনি বলেন, ভারতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ায় এই পানির প্রবাহ বেড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর