শিরোনাম
২৮ অক্টোবর, ২০২১ ১২:৪৪

প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিনেই ‘সহিংস’ ধামরাই

নাজমুল হুদা, সাভার

প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিনেই ‘সহিংস’ ধামরাই

ধামরাইয়ে প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন চারটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার মনোনীত প্রার্থীরা। বুধবার বিকেলে ও সন্ধ্যার বিভিন্ন সময় উপজেলার রোয়াইল, সোমভাগ, বালিয়া ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে।

রোয়াইল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু বলেন, ‘বিকালে নৌকার লোকজন মোটরসাইকেল নিয়া আমার অফিসের সামনে হামলা করছে। পিস্তল দিয়া এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুইড়া আতঙ্ক ছড়ায় আধাঘণ্টা পর চইলা গেছে। খড়ারচর মাঠে ১০০-১৫০ মোটরসাইকেলে ২-৩ জন কইরা আসছে। প্রত্যেক মোটরসাইকেলে ওদের হাতে একটা কইরা লাঠি আর নৌকার প্রতীক লাগানো। ওরা মূলত চাইছিল আমরা প্রতিবাদ করি। আর প্রতিবাদ করলেই বড় ধরনের সংঘর্ষ হইতো। তো আমরা অফিসের ভেতরেই বসা ছিলাম। আমি ওসি সাহেব ও রিটার্নিং অফিসারকে জানাইছি। ওনারা বলছে, লিখিত অভিযোগ দিতে। আমি কাইল অভিযোগ দেবো।’

রোয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘না বিষয়টা আমি জানিও না। আমার বিশ্বাস আমার যারা সমর্থক, তারা এই ধরনের কাজ করবে না। আমার শতভাগ আস্থা আছে নিজের মানুষের প্রতি। ওই প্রার্থী আগেও একবার বলছে একটা মিছিল গিয়ে তার বাড়ির গেট, দেয়াল ভাঙা হয়েছে। পরে আমি সেই বাড়ির ছবি তুলে এমপি মহোদয়কে দেখাই, সেখানে কিছু হয়নি। সে এমন মিথ্যা অভিযোগ করতেই থাকে।’

সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনের কর্মী বলেন, বানেশ্বর পশ্চিমপাড়া এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মাগরিব নামাজ আদায় করেন আওলাদ হোসেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ই নৌকার প্রার্থী আজাহার চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ওই পথ দিয়ে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় মিছিল থেকে তাদের উদ্দেশে স্লেজিং করতে থাকে আজাহারের লোকজন। ওই সময় বিষয়টি ভিডিও করে রাখতে গেলে তাদের এক সমর্থকের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আওলাদ হোসেন, তার ছোট ভাই বাবু, সাইফুল, সুরুজসহ তিন-চারজনকে মারধর করা হয়। পরে তারা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। 

তবে নৌকা মনোনীত প্রার্থী আজাহার আলী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘একটা মারামারির ঘটনা ঘটছে। আবার আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে আওলাদ হোসেনের লোকজন। সেই বিষয়ে আমি নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে উপজেলা পরিষদে এসেছি।’

বালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম নান্নুর কর্মীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী  বলেন, রাতে একটি ভ্যানে মাইক নিয়ে আমার চারকর্মী প্রচারণা চালিয়ে বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে সামনে থেকে আসা প্রায় ৪০-৫০টা মোটরসাইকেলের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা সবাই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমানের রাজীব ও সজীবের নেতৃত্ব দেয়। রড ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার চারজন কর্মীকেই বেধরক মারধর করতে থাকে। এসময় স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে তারা চলে যায়। পরে আহত শরিফুলসহ চারজনকেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে একজনের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার অবস্থা মুমূর্ষু।

তিনি আরও বলেন, এলাকার নিরীহ মানুষরা এমনিতেই আতঙ্কে আছেন। তার ওপর আজ এ ধরনের ঘটনায় তাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। এরকমভাবে চললে আমার নিজের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত আমি। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হোক। তাই প্রশাসনের প্রতি কঠোর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করছি।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। একটু শুনেছি পোলাপান মারামারি করছে। আমি জানি না। অভিযোগের বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম।’

গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমার কর্মী জাকির হোসেন গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়েছিল। এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার ভাতিজা আবুল কাশেম কাশি তাকে বাধা দেয়। সে প্রতিবাদ জানালে কাশি তাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেবো।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, ‘পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্তে আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে সত্যতা পেয়েছি। তবে অভিযুক্ত কাউকে ঘটনাস্থলে পাইনি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে অভিযোগের বিষয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন রেখে দেন।

ঢাকা জেলা সিনিয়র রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন খান বলেন, ‘এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। এসব বিষয় উপজেলা রিটার্নিং অফিসার আছে তারাই ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচনের দায়িত্বই তাদের। রিটার্নিং বরাবর আবেদন করলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর