বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘ইন্টিগ্রেটেড রাইস এডভাইজরি সিস্টেমস’ বিষয়ক শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কৃষকদের ফলনের ক্ষতি প্রশমন করবে। পূর্বাভাসের মাধ্যমে দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলে কৃষকদের ক্ষতি কমিয়ে টেকসই উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হবে। সোমবার সকালে ব্রির এগ্রোমেট এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবের উদ্যোগে জুম প্লাটফর্মে কর্মশালায় বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ব্রির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধান গাছের কচি থোড় থেকে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে ধানে চিটা হয়ে যায়। অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতার কারণে গাছের ছত্রাক রোগ বাড়ে এবং একইভাবে পোকামাকড়ও বাড়িয়ে দেয়। কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি খরায় আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে প্রতি বছর হাজার হাজার একর পাকা ধান আকস্মিক বন্যায় নষ্ট হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষকদের সতর্কীকরণ করা গেলে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে সংযুক্ত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলা রঞ্জন দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে জুমে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবুবকর ছিদ্দিক ও পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। এক্সপার্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন সিমিট-বাংলাদেশ এর কনসালটেন্ট ড. মইনুস সালাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এগ্রোমেট ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক ড. শাহ কামাল খান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ এস এম কামরুল হাসান এবং রাইমস-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম লীড রায়হানুল হক খান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রির কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. ইসমাইল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ও কো-অর্ডিনেটর নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান।
ব্রির কৃষি আবহাওয়া এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও মূল প্রবন্ধকার নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান জানান, আবহাওয়া পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শস্যের ফলন ৭-১০% বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫% হ্রাস এবং মোট আয় ৩১-৩৬% বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে, এখন দেশের মাত্র ৫% ধান চাষি আবহাওয়া পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা গ্রহণ করছেন। গবেষকদের দাবী পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ করলে, ধানের ফলন কমপক্ষে ৭% বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় খাদ্য ঝুড়িতে ০.১৭ মিলিয়ন টন ধান যোগ করবে। যদি আবহাওয়া পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা পুরো ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে এক টাকা বিনিয়োগে ৫১-৭৩ টাকা আয় হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ