জিয়াউর রহমান এদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে যুবশক্তির হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝংকার নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা বিনামূল্যে পুস্তক দিয়ে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে যুবকদের যাতে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র বিভ্রান্ত না করতে পারে।’
বুধবার শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম (কমলাপুর স্টেডিয়াম) মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ মণি ক্রীড়াচক্র ফুটবল একাডেমি অনুর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল। টুর্নামেন্টে মোট ১৬টি দল অংশগ্রহণ করে। ১৬ দলের মধ্যে ফাইনালে অংশগ্রহণ করেন শেখ মণি ক্রীড়াচক্র ফুটবল একাডেমি ও নবাবগঞ্জ ফুটবল একাডেমি। ফাইনাল ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় পেনাল্টি শুট আউটে নবাবগঞ্জ ফুটবল একাডেমি, শেখ মণি ক্রীড়াচক্র ফুটবল একাডেমিকে ৬-৫ গোলে পরাজিত করে।
যুবলীগ চেয়ারম্যানবিলেন, যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। যুবলীগের উদ্দেশ্য কি ছিল? কি ধরনের যুব সমাজ করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া নিশ্চিত করার জন্যই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগ গঠন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজলুল হক মণিকে নির্দেশ দিয়েছিল একটা যুব সংগঠন গঠন করতে। একদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, অন্যদিকে এক ঝাঁক যুদ্ধ ফেরত অস্ত্র হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা, যাদেরকে সুসংগঠিত করে দিকনির্দেশনা দেওয়া তখন একান্ত প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছিল। এই দায়িত্ব তিনি ৬০ এর দশকের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, তার অত্যান্ত আস্থাভাজন শেখ ফজলল হক মণিকে তিনি দিয়েছিলেন। শেখ ফজলুল হক মণি খুব কম সময়ের মধ্যে শুধু যুবলীগকে সুসংগঠিত করেন। একটা মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বহিঃবিশ্বে সম্মান অর্জন করা আমাদের কাজ। এক্ষেত্রে দেশের যুব সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য। বিশেষ করে মর্যাদাশীল দেশ গড়ার ক্ষেত্রে যুবকদের কোন বিকল্প নাই।
তিনি বলেন, যুবকরাই পারে দেশের জন্য প্রকৃত মর্যাদা নিয়ে আসতে। আমাদের এমন কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে, যাতে আমরা দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি, তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি। ক্রিড়া ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে আমরা এদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি। তাই আমাদের এক্ষেত্রে কর্মসূচি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। যুব উন্নয়ন ও ক্রীড়া ক্ষেত্র দুইটা অন্যতম মাধ্যম যার মধ্যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করা সম্ভব। তাই বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের আজ দুটি চ্যালেঞ্জ, এক হচ্ছে এ দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, দেশের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে আত্মনিয়োগ করা। গত দুই বছরে আপনাদের বিভিন্ন সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আপনারা প্রমাণ করেছেন যে আজকের যুবলীগ দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যার অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একাত্ম প্রকাশ করেছে।
আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এদেশের ক্রীড়ার মানোন্নয়নে, নীতি কৌশল, প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে বিস্তৃত ভূমিকা রাখতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। প্রথম, দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা। দ্বিতীয়ত, যুবসমাজের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করা। বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে খেলাধুলার মান উন্নয়নে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। এর জন্য যদি প্রশিক্ষণের দরকার হয়, তাহলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং দিতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ও টুর্নামেন্টের আয়োজন অব্যাহত রাখতে হবে। এপ্রিল মাসে আমাদের শেখ জামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু খেলাধুলার আয়োজন আমরা করবো। আমাদের দায়িত্ব খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনাদের এলাকায় যদি কোন আহত অথবা সাবেক খেলোয়াড় থাকে যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় রয়েছে তাদের আপনারা চিকিৎসা করবেন ও খেয়াল রাখবেন বলে আমি আশা করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, শেখ মণি ফুটবল টুর্নামেন্ট সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। আপনারা জানেন ইতিমধ্যেই যুবলীগের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় একটি সফল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের এই ফাইনালে যে দুইটি দল অংশগ্রহণ করেছে তারা প্রত্যেকেই সুন্দর খেলা উপহার দিয়েছেন। একটি অসাধারণ ফাইনাল খেলা আমরা উপভোগ করেছি। চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপ দুটি দলকেই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তরুণ সমাজকে বিপথ থেকে রক্ষা করে ক্রীড়া জগৎ, সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করি, বিশেষ করে আওয়ামী যুবলীগের পতাকাতলে সম্পৃক্ত করে একটি সুষ্ঠু, বিনোদনমুখী যুবসমাজ গড়ে তুলি।
প্রথম শেখ মণি ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, জসিম মাতুব্বর, আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মুনির মো. শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, মশিউর রহমান চপল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী পারভেজ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শামছুল আলম অনিক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মুকিত চৌধুরী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাাদক মাওলানা খলিলুর রহমান সরদার, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মুক্তা আক্তার, উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনআই আহমেদ সৈকত, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক আবদুল রহমান, সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ওয়ারেছী চঞ্চল, আরাফাত হোসেন খানসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত