৭ আগস্ট, ২০২২ ২০:৪৪
গ্রেফতার ৫ জনের জবানবন্দি

স্বামীকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণের আলামত মিলেছে

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

স্বামীকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণের আলামত মিলেছে

গ্রেফতার ৫ জন

গাজীপুরে শনিবার ভোররাতে একটি চলন্ত বাসে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় রবিবার দুপুরে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তাছাড়া এ ঘটনায় গ্রেফতাররাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার রাতে গাজীপর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়। পরে রবিবার দুপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয় বলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক এ এন এম আল মামুন জানিয়েছেন। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সানজিদা হক ভিক্টিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন বলে জানান ওই চিকিৎসক।

ডা. এ এন এম আল মামুন জানান, প্রাথমিক পরীক্ষায় ভিক্টিমের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আলামত পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের কপালে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মাথার এক্সরে করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

রবিবার বিকালে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচজনই আজ বিকালে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সজীব ও শাহীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দিনের কাছে, রাকিব মোল্লাহ ও সুমন হাসান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিনের কাছে এবং সুমন খান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জুবাইদা নাসরিন বর্নার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বিচারকের নির্দেশে তাদের  কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানোর শেষে ওই নারী স্বামীর সাথে বাসে করে এসে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে গিয়ে নামেন। পরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশে স্বামীকে নিয়ে একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানগরী অতিক্রম করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওভার পার হলে বাসের চালক, হেলপার ও অন্যরা মিলে ওই নারীর স্বামীকে মারধর করেন। তারা জোর করে তাকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেন। পরে বাসটি মাওনা হয়ে রাজেন্দ্রপুর এলাকার দিকে রওনা হয়। পথে ওই নারীকে তারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন এবং তার সাথে থাকা ব্যাগ ও নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেন। ধর্ষণের পর ওই নারীকে মাওনা থেকে গাজীপুরের দিকে যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজেন্দ্রপুরের কাছে নির্জন স্থানে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে বাসটি নিয়ে তারা পালিয়ে যান। 

পরে ওই নারী হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জয়দেবপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনা জানান। পরে জয়দেবপুর থানা পুলিশ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশকে জানান। 

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার আট ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফেতার করতে সক্ষম হয়েছে এবং লুণ্ঠিত সকল মালামাল ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ১০ হাজার ৫শ’ টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাল ২ কেজি, ১/২ কেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাল, এটিএম কার্ড  ১টি, এক বয়ম আমের আচার।

গ্রেফতার ৫ জনকে রবিবার দুপুরে গাজীপুরের তিনটি ভিন্ন আদালতে তোলা হয়। পরে তারা সেখানে বিচারকদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 
 ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন শনিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করেন।

পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে দুই জনকে এবং শ্রীপুরের কদমতলী এলাকার রাসেল মিয়ার ভাড়া বাড়ি থেকে আরো ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে বাসটিও জব্দ করা হয়।
 
গ্রেফতাররা হলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দরিপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাকিব মোল্লা (২৩),  নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে সুমন খান (২০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠালকাচারি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. সজিব (২৩), একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোলা গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে মো. শাহীন মিয়া (১৯) এবং খুলনার রূপসা উপজেলার খান মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত নূর আলমের ছেলে মো. সুমন হাসান (২২)।  

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

 
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর