নারায়ণগঞ্জে নগরীর দেওভোগ এলাকায় ছেলে রেদোয়ান আহমেদ রাজুর (১৪) গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে মা লিপি বেগমকে (৩৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১৩ নভেম্বর রাতে ছেলে রাজুকে দগ্ধ অবস্থায় (১৪) উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নিহত রাজু শহরের দেওভোগ বেপারীপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। সে শহরের একটি স্ক্রিন প্রিন্টের কারখানার শ্রমিক ছিল। তবে রাজুর মায়ের পরিবারের দাবি, রাজু নিজেই তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় শনিবার রাতে রাজুর বাবা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ লিপি বেগমকে গ্রেফতার করে।
আটক রাজুর মা লিপি বেগমের বোন মিনু বেগম দাবি করে গণমাধ্যমে জানান, রাজু আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। ঘটনার দিন রাতে রাজু ম্যাচ ও কেরোসিন তেল নিয়ে রুমে ঢুকে। পরে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
আত্মহত্যার কারণ দাবি করে তিনি আরও জানান, রাজুর প্রিন্ট কারখানা থেকে সম্প্রতি চাকরি চলে যাওয়ায় তার মা লিপি বকাঝকা করেন। এরপরেই সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে চিকিৎসকের কাছে বলে গেছে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় ও প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর থেকেই রাজুর বাবা ও মায়ের মধ্যে কলহ চলছিল। চার বছর আগে তারা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। এরপর থেকে রাজু ও তার বড় ভাই মায়ের সঙ্গে থাকতেন। ঘটনার দিন রাতে লিপির বাসা থেকে আগুনের ধোঁয়া ও কান্নার শব্দ শুনতে পায়। আগুন লেগেছে ভেবে দৌঁড়ে ঘরে ঢুকতেই দেখেন রাজু দগ্ধ অবস্থায় কাতরাচ্ছে।
মামলার বাদী রাজুর বাবা এ ঘটনার জন্য মাকে দায়ী করে বলেন, ‘ছেলের চাকরির বয়স হয়নি। তবুও তাকে দিয়ে চাকরি করিয়েছে। ছেলের চাকরি চলে যাওয়ায় নির্যাতন চালাত। স্থানীয় অনেকেই বলেছে রাজুকে হাত পা বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তার মা। ছেলের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আমি এই ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা জানান, এ ঘটনায় মা লিপি বেগমকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রবিবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা মামলার তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও জানান, আটকের পর মা লিপি কোনো কথাই বলছে না। ছেলেকে তিনি হত্যা করেছেন নাকি ছেলে আত্মহত্যা করেছে কোনো বিষয়ে তিনি মুখ খুলছেন না। আমরা তাকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ড আবেদন করেছি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানাতে পারব এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল