রাজশাহীতে তিন দিনব্যাপী সাহিত্য ও সংস্কৃতি মেলা শেষ হয়েছে। শনিবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমি সভাপতি ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
এদিকে তিন দিনব্যাপী এই সাহিত্য ও সংস্কৃতি মেলার শেষ দিনে শনিবার বাংলা একাডেমির সভাপতি ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ পন্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়ে বিশেষ সম্মাননা জানান জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ পন্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, রাজশাহী মহিলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম।
সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলম। এ সময় রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, রাজশাহী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তসিকুল ইসলাম রাজাসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, সমাজকে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশের সঠিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে দেশের আবহমান সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক।
তিনি বলেন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভিত্তি শক্ত করতে হলে আধুনিক বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মকে জাতির সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এই শিক্ষা অন্তরে ধারণ এবং লালন করতে হবে। আর তাদেরকে অবশ্যই মনুষ্যত্ববোধ এবং মৌলিক মানবিক গুণাবলির অধিকারী হতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
'সাহিত্য-সংস্কৃতি রাজশাহী অঞ্চলের ঐতিহ্য' উল্লেখ্য পূর্বক সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, সাহিত্য-সংস্কৃতির দিক থেকে রাজশাহী অঞ্চলের আছে ঐতিহ্য। এ অঞ্চলের জন্ম নেন কবি অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, রমা প্রাসাদ চন্দ, স্যার যদুনাথ সরকার, রজনীকান্ত সেনসহ প্রথিতযশা আরও অনেক কবি ও সাহিত্যিক। রাজনীতির ক্ষেত্রে এ জনপদকে যারা আলোকিত করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, এই মেলার লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য হলো সমাজকে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত করে নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি তুলে ধরা। আর সুস্থ সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করা। এর মধ্যে দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যেই স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই সেই স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী সাহিত্য ও সংস্কৃতি মেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা একাডেমির সমন্বয়ে এই মেলার আয়োজন করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এতে প্রায় দুই হাজার কবি ও সাহিত্যিকের অংশগ্রহণ করেন। আর প্রথমবারের মতো কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি মেলা' অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহীতে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত