বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, হিমোফিলিয়ার রোগীরা যাতে সহজে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক, জরুরি চিকিৎসা এবং সুলভে ফ্যাক্টর, প্লাজমা এবং অন্যান্য চিকিৎসার উপকরণ পেতে পারেন সেজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এজন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।
সোমবার বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বিবিদ্যালয়ের হেমাটোলজী বিভাগের পক্ষ থেকে র্যালি ও বিশ্বিবিদ্যালয়ের মিল্টন হলে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন শাহ সভাপতিত্ব করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম। হেমাটোলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুজাহিদা রহমান, রেসিডেন্ট ডা. তানভীর আহমেদ মেহেদী এবং ডা. আব্দুল্লা আল-মামুন সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন শাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে ও ডা. কাজী ফজলুর রহমান।
উপাচার্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হিমোফিলিয়া সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন, সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরির করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন শাহ বলেন, সকল হিমোফিলিয়া রোগীর সহজ, সুলভ ও সময়মত চিকিৎসা এদেশে দ্রুতই নিশ্চিত হবে এ আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
অন্যদিকে, সারা বিশ্বের মত আজ বাংলাদেশেও উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। হিমোফিলিয়া সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে "রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ-সকলের নাগালে আসুক বিশ্বমানের সেবা"।
হিমোফিলিয়া রোগে শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে রক্ত জমাট বাধা প্রলম্বিত হয়। রোগের তীব্রতা বেশি হলে আঘাত ছাড়াই রক্তপাত হতে পারে এবং অস্থিসন্ধি বা গিরায় বা মাংসপেশীতে বারবার রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। বারবার রক্তক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে গিরায় ক্ষয় এবং বিকৃতি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও স্পর্শকাতর অংশে (যেমন-মস্তিস্ক, খাদ্যনালী, মেরুদণ্ড) রক্তক্ষরণ হলে জীবন বিনাশের বা স্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকি তৈরি হয়। হিমোফিলিয়া প্রধানত বংশগত রোগ। সাধারণত পুরষরাই এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং নারীরা রোগের বাহক হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ ক্ষেত্রে নারীরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে না থাকলেও অন্য রোগের কারণে হিমোফিলিয়া রোগ দেখা দিতে
পারে।
বিশ্ব হিমোফিলিয়া ফেডারেশনের বার্ষিক সার্ভে ২০২০ এর তথ্যমতে প্রক্ষেপণ করা হয় বিশ্বে প্রতি লাখ নবজাতক পুরুষ শিশুদের মধ্যে ২৪.৬ জন হিমোফিলিয়া এ এবং ৫ জন হিমোফিলিয়া বি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে ৯.৫ জন হিমোফিলিয়া এ এবং ১.৫ জন হিমোফিলিয়া বি তে আক্রান্ত শিশুরা তীব্র মাত্রার রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২২০০ এর ও বেশি হিমোফিলিয়া রোগী রেজিস্টার্ড হয়েছেন। তবে ধারণা করা হয় প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে ফ্যাক্টর প্রদানের মাধ্যমে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করা এবং তীব্র রোগীদের ক্ষেত্রে যাতে রক্তপাত শুরু না হয় সেজন্য নিয়মিত ফ্যাক্টর প্রদানের ব্যবস্থা করা।
হিমোফিলিয়া ট্রিটমেন্ট সেন্টার (এইচটিসি) এর মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। গিরা ক্ষয় বা বিকৃত হয়ে গেলে ফিজিক্যাল থেরাপি বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি এ ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। এদেশে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টরের সহজলভ্যতা কম এবং বাজার মূল্যের কারণে অনেক দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোগীর পক্ষে তা কিনে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত