২৫ মে, ২০২৩ ১৬:৪৭

বগুড়ায়ও তীব্র যানজট, নিয়ম মানছেন না চালকরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায়ও তীব্র যানজট, নিয়ম মানছেন না চালকরা

বগুড়ায়ও তীব্র যানজট, নিয়ম মানছেন না চালকরা

বগুড়া শহরে তীব্র যানজট থামছে না। অবৈধ যানবাহনের দাপটে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শহরবাসী। যেখানে সেখানে গাড়ি-অটোরিকশার পার্কিং, সড়কের ওপর ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাত দখল করাসহ প্রতিনিয়ত নানা কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে শহরে। এছাড়া ফুটপাতে দোকানের মালামাল রেখে পথচারীদের চলাচলে অতিষ্ঠ করে তুলছে। এসবের মূল কারণ অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন। 

এদিকে শহরে যানজট নিরসনে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আক্তার বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে গত ৫ মাসে ৬ হাজার ৬৭২টি মামলা করেন। এর মধ্যে মামলা নিস্পত্তি হয়েছে ৬ হাজার ৩৮৫টি। আর এসব মামলায় ৩ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ টাকা অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৫ টাকা। 

হেলেনা আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে যখন যে জেলায় কর্মরত ছিলেন তখন সেখানে নানা প্রকার চমক দেখিয়েছেন। বগুড়ায় প্রতিদিনই তিনি রাস্তা থেকে যানজট নিরসনে কাজ করছেন। তার পরিকল্পনা তিনি বগুড়া শহরকে যানজটমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দেবেন। কিন্তু যানজট নিরসনে কোনো চমকই মানছে না অটোরিকশাসহ অবৈধ যানবাহনের চালক ও মালিকরা।

সাধারণ পথচারীরা বলছেন, দিন দিন শহরের অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। শহরে চলাচলরত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ট্রাফিক আইন মানছে না। ইচ্ছামত যত্রতত্র রিকশা স্ট্যাান্ড বসিয়ে যানজটের সৃষ্টি করে। এছাড়া কার-মাইক্রো, বিভিন্ন কোম্পানির পিকআপ রাস্তা দখল করে পার্কিং করে যানজট তৈরি করে। 

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা শহরের মধ্যে বগুড়া সবচেয়ে জনবহুল শহর। একই সাথে বাণিজ্যিক শহর বলে জেলায় প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। তারা ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা কাজে বগুড়ায় আসেন। যার ফলে বগুড়া শহর সবসময় সরগরম থাকে। শহরের মধ্যে নিয়ম না মেনে দিনরাত অবৈধ অটোরিকশাসহ মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান যাতায়াতের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে পার্কিং করায় যানজটের মাত্রা বেড়েই চলছে। অবৈধ অটোরিকশার জটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বেড়ে যাওয়ায় শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। এতে করে ১৫ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে এক ঘণ্টারও বেশি। বগুড়ার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। বগুড়া শহরের প্রায় তিন লাখ অবৈধ অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর চালকরা কোনো নিয়ত-নীতি মানছেন না। তাদের কোনো বৈধ লাইসেন্সও নেই। অথচ বেপরোয়াভাবে এসব অটোরিকশা দিন-রাত শহরে চলাফেরা করছে। 

শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে দক্ষিণে চার লেনের শেরপুর রোডের দুই লেনই মিনিবাস, সিএনজি, অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে। মাঝে-মধ্যে এসব ছোটবড় গাড়ি আড়াআড়ি করে রাখা হয়। এতে সড়ক দিয়ে অন্য গাড়ি যেতে পারে না। এই সড়কের মফিজ পাগলা মোড়, ঠনঠনিয়া, পিটিআই, সরকারি কলেজ, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে অস্থায়ীভাবে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন অটোগাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। একই সঙ্গে শহরের দত্তবাড়ি, বড়গোলা, থানা মোড়, সাতমাথা, খান্দার, রেলগেট, নামাজগড়, টিনপট্টি মোড়, তিনমাথা রেলগেট, চেলোপাড়া মোড়, জলেশ্বরীতলাসহ সকল সড়কেই যানজট লেগে থাকে। এসব পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে ছয় মিনিট পরপর শেরপুরগামী লোকাল বাস করতোয়া গেটলক চলাচল করছে মূল শহরের মধ্যে দিয়ে। যে কারণে ছয় মিনিট পরপরই মূল শহরে যানজট লেগে থাকছে। 

ভোর থেকে রাত ১২টা অবদি অটোরিকশাসহ ছোট-বড় গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং, প্রধান সড়কের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাথে দোকান, ফুটপাতে দোকানের মালামাল, মোড়ে মোড়ে সিএনজি ও অটোরিকশার অস্থায়ী স্ট্যান্ডের কারণে শহরটিতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। 

এদিকে বগুড়া শহরের মূল পয়েন্ট দিয়ে রেলপথ রয়েছে। এই রেলপথ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ বার ট্রেন আসা-যাওয়া করে। প্রতিবার সড়কের সিগন্যালগুলো কমপক্ষে ৩০ মিনিট বন্ধ থাকে। বিশেষ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ বার সিগন্যালে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। দিনের অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন। যানজটের কবলে পড়ে শহারবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এজন্য অপচয় হচ্ছে সময় ও অর্থ। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না শহরবাসী। 

বগুড়া শহরের পথচারী আমিনুল ইসলাম জানান, বগুড়া শহর অনেক আগে থেকেই ব্যস্ততম শহর। শহরে অসংখ্য ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এগুলো নিয়ম-নীতি না মেনে শহরে যত্রতত্র স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আমরা বগুড়াবাসী একটি পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত শহর চাই। তা না হলে আগামী দিনে আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে আমাদের।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আক্তার জানান, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে সবসময় কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লোকবল কম হওয়ায় ব্যস্ততম শহরে মাঝে-মধ্যে একটু যানজট লেগে যায়। এর মধ্যে যানজটের মূল কারণ অসংখ্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া রেলের লেভেল ক্রসিং যানজটের অন্যতম কারণ। সাধারণ পথচারীদের পারাপারে যেন সমস্যা না হয় সেজন্য ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। শহরের রাস্তার ধারণক্ষমতার অধিক যানবাহন চলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তার পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। যানজটের আরেকটি কারণ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব। যানজট নিরসনে আমরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন সড়কে অভিযান চালাচ্ছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া যানজট নিরসনে জনসচেতনার লক্ষ্যে লিফলেট, পোস্টার, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর