১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে চিহ্নিত হওয়া বিতর্কিত ডুরান্ড লাইনকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আবারও সরাসরি অস্বীকার করেছে তালেবান সরকার। দোহায় আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনার পর তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই সীমান্ত নিয়ে মিথ্যা বিবরণ তৈরির অভিযোগ এনেছেন।
মুজাহিদ বলেছেন, ডুরান্ড লাইন একটি কাল্পনিক রেখা। কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে এটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
আলোচনা চলাকালীন কাতার সরকারের প্রকাশ করা প্রাথমিক বিবৃতিতে ‘সীমান্ত’ শব্দটি ব্যবহার করা হলে আফগানিস্তান তীব্র আপত্তি জানায়। তোলো নিউজের খবর অনুযায়ী, মুজাহিদ বলেছেন, কাতার রাষ্ট্রের ‘সীমান্ত’ শব্দটি ব্যবহার করা আমাদের চুক্তির ওপর ভিত্তি করে নয় এবং আমরা এতে সম্মতি দিইনি। ডুরান্ড লাইন আফগানদের অবস্থানকে তুলে ধরে এবং একে কখনওই ‘সীমান্ত’ বলা হবে না। এটি জাতীয় পরিচয়ের বিষয় এবং জাতি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আফগান প্রতিবাদের পর কাতার তার সরকারি বিবৃতিতে দ্রুত পরিবর্তন এনে ‘দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সীমান্তে’ শব্দবন্ধটি সরিয়ে শুধু ‘দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে।
ডুরান্ড লাইনটি হলো ১৯ শতকে ব্রিটিশ এবং রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে হওয়া ‘দ্য গ্রেট গেম’-এর ফল। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্ট স্যার হেনরি মর্টিমার ডুরান্ড এবং তৎকালীন আফগান আমির আব্দুর রহমান খানের মধ্যে এটি স্বাক্ষরিত হয়। প্রায় ২৬শ' কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেখাটি আফগানিস্তান ও ব্রিটিশ ভারতের মধ্যবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গেছে। যা আধুনিক সময়ে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত হিসেবে পরিচিত।
এই রেখাটি পশতুন অধ্যুষিত অঞ্চলকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। যার ফলে উভয় দিকেই উপজাতীয় আনুগত্যের কারণে ভবিষ্যতের উত্তেজনার বীজ রোপিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর ডুরান্ড লাইন উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে। কিন্তু আধুনিক আফগান রাষ্ট্র কখনোই এটিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে স্বীকার করেনি। আফগানদের দাবি, সিন্ধু নদের পশ্চিম দিকের সমস্ত ভূমিই ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তানের অংশ ছিল।
পাকিস্তান এই সীমান্ত মেনে নিয়েছে এবং অনিয়ন্ত্রিত চলাচল বন্ধ করতে এটি সম্পূর্ণভাবে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের মূল কারণ ডুরান্ড লাইন না হলেও পাকিস্তান অভিযোগ করে যে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি আফগানিস্তানের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ থেকে পরিচালিত হচ্ছে।তবে তালেবান সরকার এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল