বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশন গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমারে গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে বিচারপতি শামসুল হুদাকে চেয়ারম্যান ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে সদস্য সচিব করে ‘নাগরিক কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিত নাগরিক কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুল হুদা ও সদস্য সচিব বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ছাড়াও বক্তব্য দেন, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য           অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায়, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল আনোয়ার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের মুখ্য সমন্বয়ক অশোক বড়ুয়া প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির বলেন, গত দেড় মাসে আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে যে মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে, রাষ্ট্র হিসেবে তার প্রধান ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। যদিও বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। আমরা এই সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি ‘নাগরিক কমিশন’ গঠন করেছি। এই কমিশনে বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের সদস্য, বিচারপতি, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, আলেমসহ শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিক সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

বক্তব্যে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘদিনের। ’৭১-এ আমরাও এই ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

বিচারপতি মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী মাসে দিল্লিতে প্রেস কাউন্সিল নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মিয়ানমারে নির্যাতনে শিকার হয়ে আমাদের দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরা হবে।

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, বার্মার সমস্যাটি নতুন নয়। একটা দেশের ১০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হওয়া চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই ঘটনায় রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের সমাজ, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আন্তর্জাতিক মানবতা লুণ্ঠিত হবে।

অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, আরাকান সম্পূর্ণ আলাদা একটি এলাকা। সেখানকার বাসিন্দা রোহিঙ্গারাও আমাদের জাতিসত্ত্বা থেকে ভিন্ন। যা আলাওলের কবিতা থেকে ফুটে উঠেছে। ’৭১-এ যখন আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, তখন গণমাধ্যমের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতার দরকার। 

 

মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এই সমস্যার সমাধান সহজে করবেন না। এর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘদিন এখানে থাকলে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। ফলে দেশের আঞ্চলিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তারা।

মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়— নিঃসন্দেহে মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। গঠিত কমিশনের আইনগত ভিত্তি নেই। কিন্তু নৈতিক ভিত্তি আছে। আমরা নৈতিকভাবে এই অপরাধের বিরোধী।

নুরুল আনোয়ার বলেন, রাখাইনে একটা সেফ জোন গঠন করলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব। এবারই এ সমস্যাকে স্থায়ী সমাধান করতে হবে। নইলে সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিবে। কয়েকদিন আগে দেখা গেছে ঢাকার কালশীতে পুলিশ দুই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে টাকা নিচ্ছে। কেউ কেউ যুবতীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করাচ্ছেন।

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য ঝুঁকি খুব বেশি। যারা পালিয়ে এসেছে তারা কখনই এমবিবিএস চিকিৎসকের দেখা পায়নি। এ ছাড়া মিয়ানমারে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। আর এদেশে আসা মানুষের মধ্যে শিশুই ৬০ শতাংশ।

অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, চেহারায় কিছুটা মিল থাকলেও কিন্তু রোহিঙ্গারা এ দেশ থেকে আরাকানে যায়নি। মিয়ানমার কারও কথা শুনতে চায় না। এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের বড় ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া মিয়ানমারকে নমনীয় করা যাবে না।

বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে আমরা জঙ্গি ঝুঁকিতে আছি। সেটি যে কোনো সময় বুমেরাং হতে পারে। অং সান সু চি শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অশান্তি। মিয়ানমারের গণহত্যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। 

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান গণহত্যা বিশ্ববিবেককে প্রকম্পিত করেছে। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। বহু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, এ কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় হবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কার্যালয়। এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এবং চলতি মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর