বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইভিএম নিয়ে জটিলতার পক্ষে নন অর্থমন্ত্রী

নীতি মেনেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

মানিক মুনতাসির

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনায় যেন কোনো ধরনের জটিলতার সৃষ্টি না হয় সে জন্য প্রচলিত নিয়মনীতি মেনেই অর্থবিভাগকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুদল মুহিত। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও এখনো ইভিএম ক্রয় সম্পন্ন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেননা অর্থের সংস্থান হয়নি। এমন কি ক্রয় কমিটিতেও এ ধরনের  কোনো প্রস্তাব পাস হয়নি। এ নিয়ে ইসি ও পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। যার কিছু নথিপত্র অর্থবিভাগেও পাঠানো হয়েছে বিষয়টির সমাধানের জন্য। ফলে এ নিয়ে অর্থবিভাগকে দ্রুত অর্থের সংস্থান ও নিয়মনীতি মেনেই প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন গত অক্টোবরে ইভিএম কেনার টাকা চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। হঠাৎ এই চাহিদা আসায় অর্থ মন্ত্রণালয় সে সময় কোনো জবাব দেয়নি। কেননা বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা নেই বললেও এখন অর্থের ব্যবস্থা করার আলোচনা করছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে অর্থ দেওয়া যায় কীভাবে সেটা করতে হবে। প্রয়োজনে সংশোধিত বাজেটে ইভিএম প্রকল্পকে যুক্ত করা যায় কি না— সে ব্যাপারেও আলোচনা শুরু হয়েছে। এ জন্য নীতিমালা ও আইনগত ভিত্তিগুলো বিশ্লেষণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনু বিভাগ। এদিকে এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ইভিএম কেনার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য টাকা বরাদ্দ ছাড়াই চীন ও হংকং থেকে ইভিএমের মূল যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানির কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।

 বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এই ইভিএম আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমোদনও দিয়েছে ইতিমধ্যে।

এর আগে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এতে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় গত ১ জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। ওই প্রকল্পে পুরো অর্থায়নের উৎস ধরা হয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। কিন্তু এর জন্য বাজেটে কোনো ধরনের বরাদ্দ রাখা হয়নি। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘বিশেষ প্রয়োজনে অর্থ সহায়তা’ খাতে বরাদ্দ খাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পরিমাণ অর্থ ইভিএম ক্রয় খাতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে অর্থবিভাগের অপর একটি সূত্র বলছে এ খাতে বরাদ্দ থাকা ৫৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, মোট দেড় লাখ ইভিএম কেনা হবে তিন ধাপে এবং চলতি অর্থবছরে ৫০ হাজার মেশিন কেনা হতে পারে। এসব মেশিনের ওয়ারেন্টি ১০ বছর। এগুলো আগামী নির্বাচনে সীমিত আকারে ব্যবহারের জন্যই কেনা হচ্ছে।

জানা গেছে, এসব মেশিন পরিচালনার জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ৩ হাজার ১১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। শুধু তাই নয়, এ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ইভিএম মেলারও আয়োজন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর