বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

শহীদ মিনার নেই বেশিরভাগ শিক্ষালয়ে

সরকারি বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও কাজ হয়নি

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

শহীদ মিনার নেই বেশিরভাগ শিক্ষালয়ে

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এর পরও চট্টগ্রামের প্রায় ৬০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তবে শহীদ মিনার ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গরূপে গড়ে ওঠে না। তা ছাড়া নতুন প্রজন্মও কখনো ইতিহাসসমৃদ্ধ হতে পারে না বলে জানান চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০০৯ সালে এক আদেশ জারির মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করে। কিন্তু ১০ বছরেও চট্টগ্রামে উপেক্ষিত রয়েছে এ আদেশ। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম মহানগরের ৪১টি ওয়ার্ডে বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের নগর ছাড়াও ১৫ উপজেলার অলিগলিতেও নির্মিত হয়েছে ছোট-বড় স্কুল-কলেজ। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে করা হলেও প্রায় প্রতিষ্ঠানে হয়নি কোনো শহীদ মিনার। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে দেশ স্বাধীন হওয়ার ও শহীদ মিনারের সঠিক অর্থ এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। এসব জানতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরুরি। সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার স্থাপনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ একটি প্রকল্পও গ্রহণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামের ১২ উপজেলার ১৭টি স্কুলে ১৭টি শহীদ মিনার ও সাতটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে।’

খুলনার বেশিরভাগ স্কুলে নেই শহীদ মিনার : খুলনার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। মাতৃভাষা দিবস বা শহীদ দিবসের তাৎপর্য কী তাও বোঝে না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। গ্রাম পর্যায়ের বেশির ভাগ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি মানে শুধুই ছুটির দিন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে আরও অন্ধকারে। জানা যায়, খুলনা জেলার ১১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ৯২০টিতেই শহীদ মিনার নেই। এর মধ্যে খুলনা মহানগরীর ১২৬টি স্কুলের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ছয়টিতে। এ ছাড়া বাগেরহাটের ১১৬২টি স্কুলের মধ্যে ৮৬৮টি ও সাতক্ষীরার ১০৯৩টি স্কুলের মধ্যে ৯৬৮টি স্কুলে শহীদ মিনার নেই। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোর চিত্রও প্রায় একই রকম। শিক্ষকরা জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণে উৎসাহিত করা হলেও বেশিরভাগ স্কুলে শহীদ মিনার নেই। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে না। খুলনা মহানগরীর নজরুলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার জানান, কোনো কোনো স্কুলে নিজস্ব অর্থায়নে শহীদ মিনার নির্মিত হলেও মূল অবকাঠামোর সঙ্গে এর মিল নেই। ফলে বিভ্রান্তিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। আর শহীদ মিনারকে ঘিরে অনুষ্ঠান না থাকায় সারা বছরই অবহেলা অনাদরে শ্রদ্ধার এই জায়গাটি থাকে উপেক্ষিত।

 গতকাল সরেজমিন মহানগরীর মেহমানে আলীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ইট, বাঁশ ও মাটি দিয়ে ছোট আকারের শহীদ মিনার তৈরি করছে। রঙিন কাগজ কেটে সজ্জিত করেছে স্কুল প্রাঙ্গণ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আছমা খাতুন জানান, স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় কোথাও কোথাও বাঁশ, কলাগাছ বা মাটি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

তবে এতে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ তৈরি হয় না।

 খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম সিরাজদ্দৌহা বলেন, সরকারিভাবে অনুদান না থাকায় স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততায় স্কুলগুলোতে শহীদ মিনার তৈরি করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া দিবস ভিত্তিক প্রভাত ফেরি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক নিভা রানী পাঠক বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরিতে সরকারি উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর