সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

উদ্যোগ নেই দক্ষিণের ৪২ নদী রক্ষায়

এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

রাহাত খান, বরিশাল

উদ্যোগ নেই দক্ষিণের ৪২ নদী রক্ষায়

বরিশাল বিভাগের ৪৫টি নদীর মধ্যে ৪২টির ৬২৯ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের চাহিদাপত্র এক বছর আগে কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলীর দফতর। কিন্তু চাহিদাপত্র পাঠানোর পরই এ উদ্যোগ ফাইলচাপা পড়েছে। এ কারণে গত এক বছরেও শুরু হয়নি দক্ষিণের ৪২ নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম। এক বছর পর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ড্রেজিংয়ের সার্ভের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সার্ভে হয়ে গেলেই অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে শুরু হবে ড্রেজিং। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. জুলফিকার আলী হাওলাদার বলেন, বরিশাল বিভাগের ৪২টি নদী ড্রেজিংয়ের চাহিদাপত্র পাঠানোর পর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন ডিপিডি হবে। এর জন্য বৃহত্তর পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি স্বীকার করেন, বরিশালের নদ-নদীতে দিন দিন চর পড়ছে। পলি জমে প্রতিনিয়ত চর বাড়ছে ছাড়া কমছে না বলে দাবি করেন তিনি। নদ-নদীর দেশ বরিশালের অভ্যন্তরীণ এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নৌপথই প্রধান মাধ্যম। স্বল্প খরচে এবং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে নৌপথের বিকল্প নেই।

 কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি নদী দিন দিন চর পড়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। পলি জমতে জমতে আড়িয়াল খাঁ আর কীর্তনখোলা নদীর একাংশ মরে গেছে অনেক আগেই। এখনো প্রতিনিয়ত পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদ-নদী। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ জোনের প্রধান প্রকৌশলীর দফতর থেকে কেন্দ্রীয় দফতরে প্রেরিত এক চাহিদাপত্রে বরিশাল জেলার তেঁতুলিয়া নদীর ৫.৬০ কিলোমিটার, পা-ব নদীর সাড়ে ৩ কিলোমিটার, রাঙামাটি নদীর ১১.২০ কিলোমিটার, কীর্তনখোলা নদীর ৮.৭৫ কিলোমিটার, সুগন্ধা নদীর ৩.৩০ কিলোমিটার, সন্ধ্যা নদীর ১৩ কিলোমিটার, জয়ন্তী নদীর সাড়ে ৩ কিলোমিটার, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলা দিয়ে প্রবাহিত কালিজিরা নদীর ১৫ কিলোমিটার, ঝালকাঠির মরা বিষখালী নদীর ১৮ কিলোমিটার, নবগ্রাম নদীর ১২ কিলোমিটার, ধানসিঁড়ি নদীর ১৩ কিলোমিটার, পিরোজপুরের মরা বলেশ্বর নদীর ১৭ কিলোমিটার, হলতা নদীর ১৪.৪৫ কিলোমিটার, ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর ৯০ কিলোমিটার, পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী নদীর ৩ কিলোমিটার, লোহালিয়া নদীর ৭৬ কিলোমিটার, গোপালদী ডন নদীর ৮ কিলোমিটার, বহালগাছিয়া নদীর ৬ কিলোমিটার, কলাগাছিয়া নদীর ৮ কিলোমিটার, মুরাদিয়া ডন নদীর ৫ কিলোমিটার, ভুরিয়া নদীর ৩ কিলোমিটার, মহীপুর নদীর (চ্যানেল) ১০ কিলোমিটার, পাটুয়া নদীর ১০ কিলোমিটার, লোন্দা নদীর ৪ কিলোমিটার, সাপুরিয়া নদীর ১৩ কিলোমিটার, টিয়াখালী ডোন নদীর ১০ কিলোমিটার, রাঙ্গাবালী নদীর ১৫ কিলোমিটার, পাঙ্গাশিয়া নদীর ১০ কিলোমিটার, ডিগ্রী নদীর ৪ কিলোমিটার, রাবনাবাদ চ্যানেলের ১০ কিলোমিটার, বরগুনার পায়রা নদীর ২৫ কিলোমিটার, কুকুয়া নদীর ২০ কিলোমিটার, টিয়াখালী নদীর ১৬ কিলোমিটার, বাদুরা ও নেউলী নদীর ২০ কিলোমিটার, নিশানবাড়িয়া ভারানী নদীর ৭ কিলোমিটার, আরপাঙ্গাশিয়া নদীর ২০ কিলোমিটার, চাওড়া নদীর ১৫ কিলোমিটার, চরদুয়ানী ভারানী নদীর ১০ কিলোমিটার, খাকদন নদীর ১৫ কিলোমিটার, বিষখালী নদীর ৩০ কিলোমিটার এবং বলেশ্বর নদীর ১০ কিলোমিটার জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং (খনন) আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়।

বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি নদীর গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। নদী ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। অপরদিকে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। এ কারণে লবণাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্যার আশঙ্কার পাশাপাশি নদীকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবন-জীবিকার সুযোগ কমে যাচ্ছে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

পরিবেশবিজ্ঞানী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষার উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই। বিআইডব্লিউটিএ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ড্রেজিং করছে। কিন্তু নদীশাসন কিংবা নাব্যতা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা)। ওয়াপদা ও বিআইডব্লিউটিএর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সমন্বয়হীনতার কারণে নদীগুলো দিন দিন নাব্যতা হারাচ্ছে। জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে নদীর নাব্যতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা বাদ দিলেও পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় নদীর নাব্যতা রক্ষা করা জরুরি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, নদী না থাকলে মাছ পাব কোথায়, ইলিশ পাব কোথায়? নদীর নাব্যতা না থাকলে ইলিশ অন্যত্র চলে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। মাছ না থাকলে নদীকেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করা লাখ লাখ মৎস্যজীবী বেকার হয়ে পড়বে। এতে সমাজে বিচ্ছৃঙ্খলা কিংবা অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন পরিবেশবিজ্ঞানী ইমামুল হক।

সর্বশেষ খবর