প্রায় দুই মাস ধরে পিয়াজের বাজারে চলছে অস্থিরতা। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে একসময় কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২৫০-২৬০ টাকায়। সরকারের নানামুখী তৎপরতায় সপ্তাহখানেক আগে পিয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। কেজিপ্রতি দাম চলে এসেছিল ২০০-এর নিচে। কিন্তু গত রবিবার থেকে আবারও পিয়াজের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। গতকাল দেশের বিভিন্ন বাজারে দেশি পিয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে ক্রেতাদের মনে আবার ভয় ধরে গেছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-
সিলেট : সিলেটের পাইকারি বাজারেই পিয়াজের দাম আবার ২০০ ছুঁয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন-চার দিন থেকে বাজারে পিয়াজ আমদানি কম থাকায় দাম বেড়ে চলেছে। আমদানি স্বাভাবিক না হলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। গতকাল খুচরা বাজারে জাতভেদে পিয়াজ ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফলে এক সপ্তাহে পিয়াজের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে যে স্বস্তি তৈরি হয়েছিল তা মিইয়ে গেছে। বরিশাল : বরিশালের পাইকরি বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ ২২০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে দাম ২৫০ ছুঁইছুঁই। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ২১৫-২২০ টাকা।
এবং বিদেশি পিয়াজ ২০০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজার ও অলিগলির দোকানে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ২৩৫-২৪০ এবং বিদেশি পিয়াজ ২১৫-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে বরিশালের পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ৩-৪ টাকা। গতকাল পিয়াজপট্টির আড়তে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৩-২৪ টাকায়। তিন দিন আগে এ আলু বিক্রি হয়েছে ১৯-২০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ২৬ টাকা কেজিতে।দিনাজপুর : হিলি স্থলবন্দরের খুচরা বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০-৪৫ টাকা। অন্যদিকে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। বাড়তে শুরু করেছে রসুনের দামও। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় পিয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে উঠেছে নতুন পাতা পিয়াজ, তা-ও দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলায় পিয়াজের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে। এক দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১১০ টাকা। সোমবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে পিয়াজ ছিল ১৪০ টাকা কেজি। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। এদিন তুরস্কের বড় পিয়াজ ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে; যা কয়েকদিন আগে ছিল ১৪০ টাকা।
পালালেন ডিলার : গোপালগঞ্জ রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে গতকাল শত শত মানুষ জড়ো হন টিসিবির পিয়াজ কিনতে। বাজারে যেখানে ২৪০ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে, সেখানে টিসিবি বিক্রি করছে ৪৫ টাকা দরে। এ কারণে ছিল প্রচ ভিড়। একপর্যায়ে ভিড় সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। ৫-৬ বস্তা পিয়াজ থাকা সত্ত্বেও মানুষের চাপ সামলাতে না পেরে টিসিবির ডিলার পালাতে বাধ্য হন।
জনপ্রিয় হচ্ছে পিয়াজ ছাড়া পিয়াজু : নাটোরের গুরুদাসপুরে পিয়াজের কেজি আবার ২৫০ টাকা হওয়ায় বিভিন্ন হোটেলে পিয়াজুতে পেঁপে ব্যবহার করা হচ্ছে। পিয়াজু বড়া তৈরির জন্য বিখ্যাত উপজেলার পাটপাড়া-বিন্যাবাড়ী বাজারে পিয়াজের ব্যবহার কমেছে। পিয়াজু দোকানি রাজীব মিয়া বলেন, ‘বিকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত পেঁপে দিয়ে পিয়াজুর বড়া বানাচ্ছি। বেচাকেনা কমেনি বরং বেড়েছে। কারণ পেঁপের তৈরি পিয়াজু ও বড়া খেয়ে কাউকে পেটের পীড়ায় ভুগতে হচ্ছে না।’ এলাকায় পিয়াজবিহীন পেঁপের পিয়াজু এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।’