একসময় জাতীয় পার্টির দ্বিতীয় দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল সিলেট। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও বলতেন সিলেট তার দ্বিতীয় বাড়ি। দলের ওই সুসময়ে সিলেটে নেতার আধিক্য ছিল কম। তবে কর্মী আর সমর্থক ছিল অসংখ্য। এখন অবস্থা বিপরীত। নেতার ভিড়ে হারিয়ে গেছেন কর্মী-সমর্থকরা। হারিয়ে গেছে পুরো সংগঠনই। নেতৃত্ব নিয়ে দলাদলি, বিভক্তি থাকলেও দলীয় কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তবে জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলকে পুনরায় চাঙ্গা করার স্বপ্ন দেখছেন নেতা-কর্মীরা। দলীয় কার্যক্রম বাড়লে নেতা-কর্মীরাও ফের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় হবেন বলে আশাবাদী দলটির নেতারা। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন সিলেট জেলার ১৩ জন নেতা। এর মধ্যে দলের উপদেষ্টা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য মকসুদ ইবনে আজিজ লামা ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন। প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিবের পদ পেয়েছেন এ টি ইউ তাজ রহমান। জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া যুগ্মমহাসচিব ও সাইফুদ্দিন খালেদ পেয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব। সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে উছমান আলী, এম জাকির হোসেন, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, নাহিদা চৌধুরী ও মুজিবুর রহমান মুজিবের। এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিলেটের এতসংখ্যক নেতার ঠাঁই হয়নি কখনো। এত পদ পাওয়ার পরও দলের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। অভিযোগ উঠছে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের অবমূল্যায়নের। এ নিয়ে সভা ডেকে অনেক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগারও করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ টি ইউ তাজ রহমানকে আহ্বায়ক ও উছমান আলীকে সদস্যসচিব করে জেলা শাখা এবং ইয়াহিয়া চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আবদুল হাই কাইয়ূমকে সদস্যসচিব করে মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সম্মেলন করে কোনো কমিটি করতে পারেনি দুই আহ্বায়ক কমিটি। এই সময়ের মধ্যে সিলেটের রাজপথেও অনুপস্থিত ছিল জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের তকমা লাগানো দলটি। বড় কোনো কর্মসূচি পালনেও দেখা যায়নি দলটির নেতা-কর্মীদের। সর্বশেষ কবে বড় কোনো কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তা দলটির দায়িত্বশীল নেতারাই বলতে পারছেন না। এজন্য দলের নেতারা দায়ী করছেন একে অন্যকে। এ অবস্থায় গতকাল ঢাকায় সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিলেটে জাতীয় পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এ টি ইউ তাজ রহমানকে আহ্বায়ক ও উছমান আলীকে সদস্যসচিব করে ১৩ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৪ মার্চ সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
দলীয় কার্যক্রম প্রসঙ্গে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব উছমান আলী বলেন, ‘সিলেটে জাতীয় পার্টির কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। এর জন্য দায়ী গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীরা। তারা নিজেরাও দলের জন্য কাজ করেননি, আবার অন্য কাউকেও তাদের নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে দেননি। ফলে দিন দিন দলে সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
সিলেটে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা আগের মতো নয় বলে স্বীকার করেন জেলা শাখার সাবেক সভাপতি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। তবে দলের নতুন চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দিকনির্দেশনায় সিলেট জাতীয় পার্টি পুরনো অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।