সোমবার, ৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাইয়ে সয়লাব বাজার

বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ভরে সেমাই বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাইয়ে সয়লাব বাজার

দেশের বিভিন্ন জেলায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদ সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের জেলায় জেলায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া এসব সেমাই বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সেমাই তৈরিতে বিভিন্ন মানহীন উপাদান ব্যবহার করা হয়; যা খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন সাধারণ মানুষ। মূলত ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই সেমাইয়ের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। সারাবছর বাজারে যে সেমাই বিক্রি হয় তার প্রায় ৯০ শতাংশই বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে গ্যাসটিক, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগে। এ ছাড়া এসব খাবারে বিভিন্ন রকমের জীবাণু থাকায় অনেক সময় টাইফয়েড এবং প্যারা টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বৃদ্ধ এবং শিশুদের নকল ভেজাল মানহীন খাবারে মারাত্মক ক্ষতি হয়। ভেজাল খাবারে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গর্ভবতী মহিলারা। ক্ষতিকর জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে নবজাতক। নকল ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি সেমাই জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।  সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নোংরা পা দিয়ে পাড়িয়ে মাখানো হয় ময়দা। যে শ্রমিকেরা এই কাজ করেন, তাদের ঘামও মিশে যাচ্ছে লাচ্চা সেমাইয়ে। সেই ময়দায় বানানো লাচ্ছা সেমাই ঢুকে পড়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্যাকেটে। আর নকল-নামি-দামি ব্র্যান্ডের নামেই সারা দেশে এই সেমাই ছড়িয়ে পড়ছে।  অভিযোগ রয়েছে- কামরাঙ্গীরচর ও রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা ও চিকন সেমাই। নোংরা স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে সেমাই তৈরির ময়দা ফেলে রাখা হয়েছে। আর তার ওপর দিয়ে হাঁটছে মাছি ও তেলাপোকা। এ ছাড়া ঘামঝরা শরীর নিয়ে শ্রমিকরা ময়লাযুক্ত মেঝেতেই ময়দার মধ্যে পানি ঢেলে সেমাইয়ের খামির তৈরি করছে। পাশাপাশি এতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রং। পরে খামির মেশিনে দিয়ে সেমাই কাটা শেষে রাখা হচ্ছে খোলা উঠান বা কারখানায় বাঁশের তৈরি নোংরা মাচাতে। সেমাই শুকানোর কাজ শেষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাজার জন্য। কড়াইতে আগের পোড়া তেলের মধ্যে ডালডা দিয়ে ভাজা হচ্ছে সেমাই। এরপর তুলে রাখা হচ্ছে নোংরা ঝুড়িতে। সব শেষে চকচকে মোড়কে প্যাকেটজাত করে কারখানার গোডাউনে রাখা হচ্ছে। পরে ট্রাক ও ভ্যানযোগে সেমাই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। এমনকি কামরাঙ্গীরচরের অধিকাংশ কারখানার বিএসটিআইয়ের অনুমতি নেই বলেও জানা গেছে। তারপরও অধিকাংশ ভেজাল কারখানা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকা, সায়েদাবাদ এবং কেরানীগঞ্জের কামরাঙ্গীরচর এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সেমাইয়ের কারখানা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ধরেছে নকল ভেজালের সঙ্গে যুক্ত অসৎ ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এমন অভিযানের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অসাধু ভেজাল ব্যবসায়ীর দল বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল লাগিয়ে নকল ভেজাল সেমাই তুলে দেয় মানুষের হাতে। ভেজাল খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ।

সর্বশেষ খবর