সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বাজেটের নতুন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত স্বাস্থ্যবিধি খাত

টেকসই সমাধানের জন্য পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজেটের নতুন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত স্বাস্থ্যবিধি খাত

করোনা মহামারীর মতো নতুন বাস্তবতায় আসন্ন বাজেটে নতুন অগ্রাধিকার খাত হিসেবে স্বাস্থ্যবিধিকে যুক্ত করে পৃথক বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হয়েছে। এই মহামারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানটি সবার জন্য পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি, বিশেষত পানি ও সাবানের ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা নিশ্চিত করার সঙ্গে সম্পর্কিত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউসহ অন্যান্য উপসর্গকে ধ্বংস করার জন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে তাৎক্ষণিক বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। গতকাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দ বিষয়ে বাজেট-পূর্ব এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আলোচকরা এ দাবি উত্থাপন করেন। ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ও এমএইচএম নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বক্তারা বলেন, জনসমাগমস্থল, হাট-বাজার, বাস টার্মিনাল, সরকারি ও বেসরকারি অফিসসহ দেশের বড় শহরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য হাত ধোয়ার স্থানে পানি, হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবানের ব্যাপক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শহর কিংবা গ্রামের পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কার্যকর নানা সুযোগ-সুবিধাসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা খুবই প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কভিড-১৯ অনেক পরিবারকে দারিদ্র্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার উপকরণ জোগানে সামর্থ্য হারিয়েছে। বিশেষ করে নারীরা মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছেন। আসন্ন বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিনে অতিরিক্ত ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্তন এবং তা সামর্থ্যরে মধ্যে রাখার জন্য মূল্যহ্রাস করাকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবশ্যই জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ছয় অর্জনের জন্য ২০২১-২০২২ জাতীয় বাজেটে যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে। চলমান মহামারীর কারণে ওয়াশ খাতে বাজেটের ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এসব অসমতা দূর করে আগামী জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজিএস) অর্জনের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করা খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন, হাইজিনের বিষয়টি এখনো স্বাস্থ্য খাতের একটি সাব-সেক্টর হয়ে রয়ে গেছে। যার কারণে বরাবরই এ খাতে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়। তবে এ বছর এই খাতে যথাযথভাবে মনোযোগ না দেওয়া হলে মহামারী আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মিকস জরিপ ২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের উন্নত স্যানিটেশনের সুবিধা রয়েছে। এই জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত জ্ঞান যথেষ্ট থাকলেও হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি চর্চার হার খুব কম।

জেএমপির ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের হাত ধোয়ার স্থানে সাবান ও পানির সুবিধা রয়েছে। দেশে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত ধারণা যথেষ্ট থাকলেও এর চর্চা খুব কম। সে জন্য সবার জন্য হ্যান্ড হাইজিনের প্রয়োজনের পাশাপাশি দেশব্যাপী এর প্রচারণারও চালানো দরকার বলে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

সর্বশেষ খবর