বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নব্য জেএমবির বোমার প্রধান প্রশিক্ষকসহ গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক, বোমা প্রস্তুতকারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। তারা হলেন মো. জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাইল হাসান ওরফে ফোরকান, সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা এবং মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আবদুল্লাহ। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, কয়েক বছরে পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালান নব্য জেএমবির সদস্যরা।

 বোমাগুলো ছিল একই ধরনের। যারা বোমগুলো বানান তাদের বিভিন্ন সময় অভিযানে গ্রেফতার করা হয়। এরপর নতুন করে আবার মেলে একই ধরনের বোমার খোঁজ। ফলে তদন্তে নামে সিটিটিসি। তদন্তের একপর্যায়ে উঠে আসে নব্য জেএমবির সদস্য জাহিদের নাম। তিনিই অনলাইনে বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে কর্মীদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন।

গ্রেফতার জাহিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে অনলাইনে ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’ নামের আইডির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। রসায়নে পরদর্শী জাহিদের মেধা ও সাহসের কারণে তাকে এ সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। অল্প দিনেই তিনি গ্রেনেড ও বোমা তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং নিত্যনতুন কৌশলে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) প্রস্তুত করেন। এ সংগঠনের যারা বোমা ও গ্রেনেড তৈরি করেন তাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন জাহিদ।

সিটিটিসির কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি হিসেবে পরিচিত ছিলেন জাহিদ। জাহিদের গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। তিনি লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। ২০১১ সালে পাথরঘাটা সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতক সম্পন্ন করলেও জেএমবিতে যোগদানের কারণে মাস্টার্স শেষ করেননি জাহিদ।

সিটিটিসির ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জিএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা গ্রেফতার অথবা নিহত হলে এ সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় জাহিদ গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। পুনরায় তিনি নতুন আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যারা অত্যন্ত সাহসী ও সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন জাহিদ।

তিনি সংগঠনটির তৎপরতা বাড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং করেন। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ কারাত ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণও নেন। বড় কোনো কেমিক্যাল সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে এক্সপ্লোসিভ তৈরির উপাদান নিয়ে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তার।

সর্বশেষ তিনি ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সঙ্গে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। জেএমবি আমিরের নির্দেশে যেসব হামলা ঘটেছে সেসবের মূল সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন জাহিদ।

গ্রেফতার সাইফুল বোমা তৈরির একজন দক্ষ কারিগর। অনলাইনে জাহিদের থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার বিষয় তিনি স্বীকার করেছেন। সাইফুল ও রুম্মান সংগঠনের ফান্ড তৈরির জন্য ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতি করার জন্য গাজীপুরের টঙ্গী থানার রেলগেট এলাকায় রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর