সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজশাহীর আরও ১২০০ পরিবার পেল বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর আরও ১২০০ পরিবার পেল বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা

রাজশাহীতে বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা তুলে দেন নওহাটার পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হাতের নিপুণ কারুকাজে বাঁশ দিয়ে সবজির ডালি বানান শফিকুল ইসলাম। ৩০ বছর ধরে এ কাজ করেন তিনি। শুরুতে সপ্তাহে ১০-১২টি ডালি বানাতেন। তবে ২০ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় শফিকুলের একটি পা কাটা পড়ে। এর পর থেকে কর্মক্ষমতা কমেছে তার। এখন ফরমায়েশ পেলে ঘরে বসে তিনি ও স্ত্রী মিলে সপ্তাহে চার-পাঁচটা বানান। সপ্তাহে আয় করেন মাত্র ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এই সীমিত আয়েই এক সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন তারা। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় তাদের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। সহায়তা পেয়ে শফিকুল বলেন, ‘আপনাদের খাবার পেয়ে ১০ দিনের অভাব কমে গেল।’ রবিবার রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর উপজেলার ১২০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। পবা উপজেলার নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে নওহাটার পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের উপজেলার অসহায় পরিবারের মধ্যে উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছে। তাই তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। গত বছর করোনার শুরুতে অনেকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজের বাড়ির পাশের প্রতিবেশীও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু এবার সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ এবারও লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। এই মহতী উদ্যোগের জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।’ মোহনপুর উপজেলায় ৩০০ অতিদরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। ফাতেমা বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘করোনাতে খুব কষ্ট করে আছি। এহন আবার বাড়ির ওপর পানি উঠছে। নৌকা দিয়া বাড়িতে যাইতে হয়। এই সময়ে তোমাদের খাবার পেয়ে উপকার হইছে। আল্লাহ তোমাদের সুখে-শান্তিতে রাখবে।’ সালমা বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘আমাদের কেউ সাহায্য করে না। অনেক আগে একবার সেমাই, চিনি পাইছিলাম। আর পাই নাই। খুব অভাবে আছি। আপনাদের এই চাল, ডাল দিয়া শান্তিতে কাটবে কিছুদিন।’ বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বর্গা নিয়ে পান চাষ করেন ইউসুফ আলী। বাজারে পানের দাম একেবারে কম হওয়ায় লাভ করতে পারছেন না। এখন পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। এই সংকটকালে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি। ইউসুফ বলেন, ‘এমন সাহায্য পেলে খুব ভালো হয়। এহন আমরা অভাবে আছি। এই খাবারে আমার মতো পরিবার ১৫ দিন খাইতে পারব। এমন মাঝে মাঝে পাইলে আমাদের দুঃখ থাকবে না।’ দুর্গাপুর উপজেলার আমগাছী সাহার বান উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন শুভসংঘের সদস্যরা। খাদ্য সহায়তা পেয়ে রোকেয়া বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘আমার ভিটামাটি কিছু নাই। অভাব-অনটনে তোমাদের খাবার পেয়ে কয়ডা দিন খাইতে পারব।’ খাদ্যসামগ্রী বিতরণের চলমান কার্যক্রমের বিষয়ে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা দেশব্যাপী দুই লাখের অধিক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে রংপুর বিভাগের সব জেলায় ২৪ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এখন রাজশাহী বিভাগে আরও ২৪ হাজার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কাজ করছি। এরপর আমরা খুলনা বিভাগের সব জেলায় এই কার্যক্রম সম্প্রসারিত করব।’ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কাউসার আলী, উপাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সরকার দুলাল মাহবুব।

সর্বশেষ খবর