সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাবিতে হল খোলার প্রস্তুতি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সবুজ সংকেত দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান, ফজলুল হক মুসলিম, সলিমুল্লাহ মুসলিম ও বিজয় একাত্তর, জগন্নাথ হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হলে গতকাল দেখা গেছে প্রস্তুতির নানা চিত্র। টয়লেট ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হল ভবনের দেয়ালে রং করা, বাগানে নতুন ফুলগাছ লাগানো ও মাঠের ঘাস কেটে ছোট করা হচ্ছে। প্রত্যেক হলের প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে হাত ধোয়ার বেসিন। হলের ডাইনিং রুম, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুমে চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। হল খোলার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের অধ্যাপক ড. আবদুুল বাছির বলেন, ছাত্রদের ওয়াশরুম, ক্যান্টিন, হলের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে উপাচার্যের সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে।

সে অনুযায়ী হলগুলোতে প্রস্তুতির কাজ চলছে, যাতে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে একটি সুন্দর পরিবেশ পায়।

হল খোলার তারিখের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ বা ১৫ অক্টোবরের কথা বলা হচ্ছে। এই তারিখ এগিয়ে আনা বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

ক্যাম্পাস খুললে যেভাবে চলবে : ক্যাম্পাস খোলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা কীভাবে তাদের জীবন অতিবাহিত করবেন-  সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিধি প্রণয়ন করেছে। এতে ক্যাম্পাস খোলার পূর্ব পদক্ষেপ, অভ্যন্তরীণভাবে পালনীয় বিষয়াদি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, যেমন শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরি প্রভৃতি কীভাবে চলবে প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।

অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন হলে থাকবে, তখন তাকে তিনটি নির্দেশনা মানতে হবে। রুমে কোনোভাবেই ফ্লোরিং করতে পারবে না। কক্ষের বাইরে এলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। কক্ষের আশপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে। অতিথি অনুমোদিত হবে না। শিক্ষার্থীরা বাইরে এলে হাঁচি-কাশির সময় কনুইয়ের ভাঁজে বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। ক্যান্টিন, টিভিরুম বা হলের কোনো জায়গায় গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের দুরারোগ্য ব্যধি থাকলে তা আগেই কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তো হলে রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র বা শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলোতে যেতে হবে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে সেখানে সেবা দেওয়া হবে। হল খোলার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়গুলো কার্যকর হবে।

গণরুম চায় না ঢাবি : হলের একটি কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের থাকার ‘বিভীষিকাময় গণরুম সংস্কৃতি’ থেকে বের হতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হল খুলে দিলে অছাত্র ও বহিরাগতদের কোনোভাবেই হলে থাকতে দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে ফাঁকা হওয়া আসনগুলোতেও বরাদ্দ দেওয়া হবে, যাতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে, তাতে তাৎক্ষণিকভাবে গণরুম সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। গণরুম তো অনেক দিন ধরে গড়ে উঠেছে। এখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সব শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলো সহযোগিতা করলে গণরুমের প্রসঙ্গটি হয়তো আর থাকবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর