শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বপ্ন এবার হাসি ফোটানোর

♦ পুলিশে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭২ জনের মধ্যে ৫৭ জনই কৃষক পরিবারের ♦ সেবার মাধ্যমে হাসি ফোটাতে চান পরিবার ও অসহায়ের মুখে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

চঞ্চল চন্দ্র দাশ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পন্নগ্রামের কৃষক। স্ত্রী আর পাঁচ সন্তান নিয়ে সাত সদস্যের পরিবার চঞ্চল দাশের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। অন্যের জায়গা বর্গা চাষে সংসার চলে তার। অনটনের সংসারেও ছেলেমেয়েদের মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন চঞ্চল। তাই টানাপোড়েনের সংসারেও বন্ধ করাননি তাদের পড়ালেখা। চঞ্চল দাশের সেই স্বপ্নের আকাশে যেন ভোরের আলো আভা ছড়াচ্ছে। তার মেয়ে স্বর্ণা দাশের পুলিশে চাকরি হয়েছে। দুঃখ-কষ্টের সংসারে এক চিলতে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন স্বর্ণা। এমন আনন্দ বইছে সিলেটের ৫৭ কৃষক পরিবারে। এবার সিলেটে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ৭২ জনের মধ্যে ৫৭ জনই দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। পুলিশের চাকরি নিয়ে পরিবার আর দেশের অসহায়-নির্যাতিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাদের স্বপ্ন। সিলেটে পুলিশ কনস্টেবল পদের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ৭২ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই ৭২ জনের একজন কৃষককন্যা স্বর্ণা রানী দাশ। অন্যদের মতো স্বর্ণার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। কৃতজ্ঞতার ঝিলিক। এই কৃতজ্ঞতা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সিলেটের পুলিশ সুপার ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতি। স্বর্ণা জানালেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। বড় ভাই পিংকুকে বলে রেখেছিলাম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে সে যেন জানায়। এবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর তাকে সঙ্গে নিয়েই অনলাইনে আবেদন করি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হলেও নিজের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। আমার ধারণা ছিল তদবির ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের স্বচ্ছতা দেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। শেষ পর্যন্ত বুঝলাম এখন আর তদবিরে চাকরি হয় না পুলিশে।’

সিলেটে কৃষক পরিবারের যে ৫৭ জন পুলিশে চাকরি পেয়েছেন তাদের পরিবারের প্রথম চাকরিজীবী হিসেবে নাম লেখাতে যাচ্ছেন তারা। তাদের স্বপ্ন এখন সেবার মাধ্যমে পরিবার ও দেশের অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। যেমনটা বলছিলেন কানাইঘাট উপজেলার শাহাপুর গ্রামের শফিকুল হকের ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম, ‘শুধু চাকরির জন্য পুলিশের চাকরি করতে চাই না। দেশ ও মানুষের সেবার লক্ষ্য নিয়েই এ পেশায় আসার চেষ্টা করেছিলাম। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ায় নিজের যোগ্যতা দিয়েই চূড়ান্ত হয়েছি।  সিলেট জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২ থেকে ৪ নভেম্বর তিন দিনের মাঠ পরীক্ষায় অংশ নেন ২ হাজার ৮৮০ জন।  আগে স্থানীয়ভাবে হলেও এবার প্রশ্নপত্র তৈরি ও ফলাফল মূল্যায়ন হয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন ১৭১ জন। আর মৌখিক পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদের জন্য চূড়ান্ত হন ৭২ জন। নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, এবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আইজিপির নির্দেশে নিয়োগে আরও বেশি স্বচ্ছতা এসেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় এখন আর দালালদের দৌরাত্ম্য, অর্থের লেনদেন ও তদবিরের কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রার্থীরাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছেন। নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেয়েছেন। এর প্রমাণ সিলেটে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭২ জনের মধ্যে ৫৭ জনই কৃষক পরিবারের সন্তান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর