বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে জানিয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যে ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে করোনায় আরও ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের ৫৩টি দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সূত্র : বিবিসি।
ডব্লিউএইচও বলেছে, ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে ৪৯টি দেশের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোর (আইসিইউ) ওপর ‘উচ্চ অথবা প্রবল চাপ’ পড়বে। খবরে বলা হয়, ইউরোপে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় অস্ট্রিয়া ফের লকডাউন জারি করেছে। আর অন্য দেশগুলো নতুন বিধিনিষেধ আরোপের কথা বিবেচনা করছে। টিকা দেওয়া পূর্ণ হয়েছে এমনটি বিবেচনা করতে শিগগিরই তাদের নাগরিকদের জন্য বুস্টার ডোজ বাধ্যতামূলক করতে পারে ফ্রান্স, জার্মানি ও গ্রিসসহ কয়েকটি দেশ। কিন্তু ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেই নতুন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ চলছে। নেদারল্যান্ডসে আংশিক লকডাউন জারি করার পর থেকে টানা কয়েক রাত ধরে দাঙ্গাও হয়েছে। বাড়তে থাকা সংক্রমণ মোকাবিলায় দেওয়া নতুন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও ইতালিতেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, তাদের হিসাব অনুযায়ী ইউরোপ অঞ্চলে মৃত্যুর প্রধান কারণ কভিড-১৯। গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাটি বলেছে, ‘এখানে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যা আগামী বসন্তের মধ্যে ২২ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে চলতি ধারার ভিত্তিতে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।’ সম্প্রতি নিশ্চিত করা কভিড-১৯ জনিত মৃত্যু দ্বিগুণ হয়ে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। শুধু রাশিয়াতেই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা সম্প্রতি ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। ডব্লিউএইচও বলছে, কিছু দেশে বহু সংখ্যক লোকের টিকা না নেওয়া ও করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপকতা ইউরোপ অঞ্চলে উচ্চ সংক্রমণ হারের প্রধান কারণ। যারা এখনো টিকা নেননি তাদের তা নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডব্লিউএইচওর ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক ডা. হ্যান্স ক্লুগ।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা টিকা সত্ত্বেও মৃত্যু বেশি : টিকা উৎপাদন এবং ব্যাপকভাবে প্রদান করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ বছর ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৩৩ জন। অথচ গত বছর টিকা আবিষ্কার না হলেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৩। অর্থাৎ এ বছরের চেয়ে কিছু কমই ছিল। সিডিসি সূত্রে গত বছর এবং এ বছরের মৃত্যুর এ সংখ্যা জানা গেছে। অবস্থাদৃষ্টে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মনে হচ্ছে বছর শেষে গত বছরের চেয়ে এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বাড়বে। শুধু তাই নয়, নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এবার মৃত্যুর হারও বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা রোগটি নিয়ে এখন আর ভয়ংকর আতঙ্ক নেই, এটি অন্যসব জটিল রোগের মতোই চিকিৎসকের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। করোনা স্বাভাবিক রোগের পর্যায়ে এসেছে, এখন আর তা কোনো মহামারী নয়।একসময় কলেরা কিংবা ফ্লুর মতোই নিয়মিত চিকিৎসার আওতায় আসবে করোনা। অর্থাৎ টিকার প্রচলন যত বাড়বে করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তাও কমবে সর্বসাধারণের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্ত বয়স্ক সবার জন্য বুস্টার ডোজ নেওয়ার অনুমতি মেলায় সর্বত্র করোনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা একেবারেই স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। বিমান, রেল, বাসে লোক চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলেও সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের টিকা নেওয়ার যোগ্য অধিবাসীদের মাত্র ৫৯% পূর্ণ ডোজের টিকা নিয়েছেন বলে সিডিসি জানিয়েছে। বিশ্বে ধনী সাত দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে কম। জন্স হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির এপিডেমিওলজিস্টএবং সিনিয়র স্কলার জেনিফার নুজো উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে গত মঙ্গলবার বলেছেন, এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, ধনী দেশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম মানুষ টিকা নিয়েছে আমেরিকায়। এর ফলে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে মনে করা সমীচীন নয়। কারণ, যারা টিকা এখনো নেয়নি তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল এবং সাম্প্রতিক সময়ে তা দৃশ্যমানও হয়েছে। এখন যারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন তাদের ৯৮% টিকা নেননি। বেলভ্যু হাসপাতাল সেন্টারের সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ ড. সিলীন গাউন্ডার মনে করছেন, মোট জনসংখ্যার ১৫%-এর করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে। এমন অবস্থাকে সাথী করে টিকা না নেওয়ার মানসিকতা লালন করা উচিত নয়। পুরো সমাজের জন্যই এটি হুমকিস্বরূপ। ৮৫% থেকে ৯০% আমেরিকান টিকা নিলেই কেবলমাত্র স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কথা নিশ্চিন্ত বলে ভাবা সম্ভব।