বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁস করে তারা কোটিপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে কোটিপতি হয়েছেন পেশাজীবী লীগের সভাপতি আর আদালতের এক কর্মচারী। দুজনের বাড়ি রংপুর জেলায়। ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেট থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ।

এরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ ও রবিউল ইসলাম রবি। এদের মধ্যে রবিকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি পুলিশ। জাহিদকে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জাহিদ রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্টেনোটাইপিস্ট হিসেবে কাজ করেন। আর রবি বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী লীগের রংপুরের সভাপতি।

এর আগে ৬ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। তারা হলেন- মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহামান মিলন এবং রাইসুল ইসলাম স্বপন। এর পরদিন গ্রেফতার হন সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এ বি এম জাহিদ। এদের মধ্যে পঁঁচজনই বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা। 

গতকাল ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহাদত হোসেন সুমা জানান, সোহেল রানার কাছ থেকে জাহিদ ও রবির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে জাহিদ ও রবিকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনই সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হয়ে কাজ করার কথা স্বীকার করেছেন। ডিবি সূত্র জানায়, জাহিদ ও রবি রংপুরের কেরানীরহাট এলাকায় বাস করেন। মিজু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে কয়েক বছর ধরে তারা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে বিক্রি করে আসছিলেন। সর্বশেষ সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তারা মিজুর সঙ্গে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় প্রশ্ন কেনার চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী মিজু পরীক্ষার আগে তাদের এক সেট প্রশ্ন দেন। সেই প্রশ্নপত্র তারা বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের কাছে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকায় জনপ্রতি বিক্রি করেন। আদালতের সাধারণ একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করা জাহিদ প্রশ্ন ফাঁস করে রংপুরের কেরানীহাটের কামদেবপুর এলাকায় অনেক জমি কিনেছেন। এ ছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করেছেন। রবির রংপুরে একটি ইউনানী ওষুধের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ব্যবসার আড়ালে তিনি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন। তিনিও জাহিদের মতো অবৈধ আয় দিয়ে জমিসহ বিভিন্ন ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করেছেন। সবশেষ সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তারা মিজুর কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নপত্র সোহেল রানার কাছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা চুক্তিতে বিক্রি করেন। সোহেল ৫২ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদানও করেন জাহিদকে। রবি ও জাহিদ জনতা, রূপালিসহ সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকসহ মোট পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা পেয়েছেন। জানা গেছে, পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি ও পরীক্ষা নেওয়ার কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে পেয়েছিল আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা প্রশ্ন ছাপাখানা থেকেই ফাঁস হতো। এতে মোক্তারুজ্জামান রয়েলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মচারী জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নামও এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর