সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

সওজের জায়গায় অর্ধশত ভবন

গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সওজের জায়গায় অর্ধশত ভবন

সিলেটে সড়কের জায়গার ওপর নির্মিত বহুতল ভবন সওজ ও সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আম্বরখানা থেকে টুকেরবাজারের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। সড়কের এই অংশের উভয়পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে এসব স্থাপনা। এর মধ্যে অনেকগুলো বহুতল ভবনও রয়েছে। রয়েছে মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টারের মতো বাণিজ্যিক স্থাপনাও। এবার সিটি করপোরেশন ড্রেন নির্মাণের জন্য সড়কের সীমানা খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ে দখলদারিত্বের বিষয়টি। সওজ সূত্র জানায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম অংশ আম্বরখানা থেকে টুকেরবাজার। সড়কের উভয়পাশের মূল্যবান জায়গা দখল করে অনেকেই বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন। কেউ কেউ সড়কের জায়গায় বর্ধিত করেছেন বাসা-বাড়ি। বছরের পর বছর ধরে জায়গা দখলের এই মহোৎসব চললেও সওজ কর্তৃপক্ষ ছিল নীরব। কখনো এসব স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সওজ কর্তৃপক্ষকে। তবে এবার সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় মহাসড়কটির আম্বরখানা-টুকেরবাজার অংশে  অভিযান শুরু করেছে সওজ। গত বৃহস্পতিবার থেকে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় শুরু হয়েছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। গতকাল পর্যন্ত ওই এলাকার অন্তত ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘আহাদ ভিলা’ নামের চারতলা আবাসিক ভবন, ‘জামান ভিউ’ নামের একটি মার্কেট, ‘জামান কমপ্লেক্স’ নামের পাঁচতলা একটি আবাসিক ভবনও রয়েছে। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি সওজ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে অবৈধ দখলদারদের স্বেচ্ছায় স্থাপনা সরিয়ে নিতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়ের পর কাউকে আর নতুন করে সময় দেওয়া হবে না বলেও গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ স্থাপনা সরিয়ে নেননি। তবে স্থাপনার মালিকদের অভিযোগ, তারা কোনো নোটিস পাননি। পত্রিকার গণবিজ্ঞপ্তি তাদের চোখে পড়েনি। সওজ কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল উচ্ছেদ অভিযানের আগে তাদের লিখিত নোটিস প্রদান করা। পাঠানটুলার আহাদ ভিলার তত্ত্বাবধায়ক ফারুক আহমদ বলেন, ‘সওজের জায়গায় এই ভবন নির্মাণ হয়েছে কিংবা ভবনটি অবৈধ- এমন কোনো নোটিস দেয়নি সওজ। সিটি করপোরেশন  থেকেও কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় ভবনের বাসিন্দারা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। এমনটা করা মোটেই উচিত হয়নি। সওজ ও সিটি করপোরেশন অমানবিক আচরণ করেছে।’ সূত্র জানায়, নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের সীমানা টুকেরবাজার পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। বর্ধিত এই অংশের সড়কের পাশে ড্রেনেজ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ৩২ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করেছে সিসিক। কিন্তু অবৈধ স্থাপনার কারণে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছিল না সিসিক। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ‘সড়কের উভয় পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ১০ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত দখল করে রেখেছেন। জায়গার মালিক সওজ হওয়ায় সিসিক যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। সওজ সিলেট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সড়কের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু মালিকরা স্বেচ্ছায় স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। আপাতত সড়কের দক্ষিণ পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর