রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষে জমি কমলেও উৎপাদন বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে কৃষি ব্যবস্থা ছিল খরাপীড়িত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বদলে যায় বরেন্দ্রখ্যাত এই অঞ্চলের কৃষি। ভূগর্ভস্থ সেচের কল্যাণে বৃষ্টিনির্ভর কৃষিতে বিপ্লব আসে। রোপা আমন ছাড়াও উফশী বোরো ধানের ভাণ্ডার হয়ে ওঠে এই অঞ্চল। আঞ্চলিক কৃষি দফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত প্রায় এক যুগে এই অঞ্চলে ধান চাষের পরিধি কমেছে প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮২ হেক্টর। তবে উল্টো চিত্র উৎপাদনে। এই এক যুগের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ হাজার ৮৫ টন। এই অঞ্চলে আমসহ বাণিজ্যিক ফলবাগান বাড়ায় ধান চাষের আওতা কমছে প্রতি বছরই। তবে উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত জাত আসায় ধানের উৎপাদন বেড়েছে। বিজ্ঞানী ও কৃষি দফতরের প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে কৃষক। ফলে বদলে যাওয়া কৃষিতে তারাই এখন আশার আলো। আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০০৮-২০০৯ মৌসুমে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আউশ, আমন ও বোরো মিলে মোট ধানের আবাদ ছিল ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৩ হেক্টর। সেবার ধান উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৭০ হাজার ২৪৩ টন। অন্যদিকে ২০২১-২০২২ মৌসুমে এই চার জেলায় মোট ধানের আবাদ ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার ৫৩১ হেক্টর। তাতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ টন। ১৪ বছরের ব্যবধানে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮২ হেক্টর ধানের আবাদ কমেছে। তবে এই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ হাজার ৮৫ টন। ২০০৮ থেকে ২০২২ এই ১৪ বছরে নওগাঁ জেলায় ধানের আবাদ কমেছে ৩৪ হাজার ৯০ হেক্টর। একই সময়ের ব্যবধানে রাজশাহীতে ৪৭ হাজার ৫৩৯ হেক্টর, নাটোরে ২২ হাজার ৯৯৩ হেক্টর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর ধানের আবাদ কমেছে।

ধান চাষের পরিধি কমার কথা স্বীকার করে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু হোসেন জানান, এখানকার কিছু এলাকায় কেবল একটি ফসল ধান চাষ হতো। সেটিও ছিল বৃষ্টিনির্ভর। সেচ সুবিধাসহ আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসছে। ধানের জমিতে আমবাগান হওয়ায় ধান চাষের পরিধি কমছে, এটা সত্য। তবে আমরা বলছি, যেসব জমি প্রকৃত ধানি, সেগুলো ধানের জন্যই রাখতে হবে।

ব্রি রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান ড. ফজলুল ইসলাম বলেন, ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে এখানকার বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন।  এরই মধ্যে বেশ কিছু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন হয়েছে। এগুলো এই অঞ্চলে চাষের উপযোগী। আইসে চাষ উপযোগী ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ এবং ব্রি ধান-৯৮ উদ্ভাবন করেছেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী এবং নওগাঁর মহাদেবপুরে এই ধান চাষ হয়। এই ধান তুলে গোদাগাড়ীতে টমেটো এবং মোহনপুরে আলু চাষ করেন কৃষক। অতি সম্প্রতি উচ্চ মাত্রার জিঙ্কসমৃদ্ধ এবং রোগ প্রতিরোধী ব্রি ধান-১০২ উদ্ভাবন হয়েছে। এই জাতটি আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, কৃষকদের জন্য চাষের নানান কলাকৌশল এনেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন হয়েছে। সেগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর