১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল শেখের (মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নম্বর-০১৪৭০০০০৩৮০) নেতৃত্বে খুলনার তেরখাদায় ৯১ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি তেরখাদা, রূপসা, কালিয়া, নড়াইল ও মোল্লাহাট এলাকা নিয়ে ‘উত্তর খুলনা মুক্তি বাহিনী’ নামে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন। এর বাইরে আরও দু-একটি ছোট বাহিনী তেরখাদা এলাকায় যুদ্ধ করে। যুদ্ধের পর কর্নেল ওসমানীর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত হন অনেকে। কিন্তু ধাপে ধাপে তেরখাদায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৬২ জন। সর্বশেষ তেরখাদায় আরও ৬০০ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছেন। যা নিয়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই।
এরই মধ্যে আবেদনকারীদের সহযোদ্ধা হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান ও নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে আদালতে রিট ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও অবসারপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবদুুল জলিল শেখ। তিনি বলেন, তেরখাদা উপজেলায় একটি চক্র অসৎ উপায়ে নিজেদের আখের গোছাতে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদানের চুক্তি করছে। আমি এলাকায় ওই সময় যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেও তাদের চিনি না। এ ঘটনায় হাই কোর্টে রিট করলে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আদালতে মামলা চলমান থাকলেও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করা যাবে এমন নির্দেশনা প্রদান করে। পরে ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খান মোহাম্মাদ আলীকে সভাপতি এবং তেরখাদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার চৌধুরী আবুল খায়েরকে সদস্য মনোনয়ন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালু করার নির্দেশনা দেয়।
কিন্তু তালিকায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ৬০০ ব্যক্তির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের নামে ফের অর্থ বাণিজ্য শুরু হয়েছে। যারা আবেদনকারীদের ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদেরও অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এ বিষয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের নামে অর্থ লেনদেন বন্ধ হয়নি। যা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘আমি তিন সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটিতে সদস্য সচিব। আমি সহযোদ্ধাদের মতামত, তথ্য-উপাত্ত সবকিছু যাচাই-বাছাই করে যেটা ভালো মনে হবে সেই রিপোর্ট দেব।’