সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। লাখো মানুষের জমায়েত নিশ্চিতে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা চালাচ্ছেন নিরলস প্রচারণা। চলছে দফায় দফায় বৈঠক, নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। দীর্ঘদিন পর বড় আকারের এই কর্মসূচি ঘিরে সিলেট বিএনপি এখন উৎফুল্ল- উচ্ছ্বসিত। তবে পুলিশের জারিকৃত একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত দিনে গণসমাবেশ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া সমাবেশে বাধা, পথে পথে হামলা, গ্রেফতার ও পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কায় রয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ফলে উচ্ছ্বাসের আড়ালে রয়েছে উৎকণ্ঠাও। বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের সবকটি বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশালে গণসমাবেশ করেছে দলটি। সিলেটে গণসমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে ২০ নভেম্বর। সমাবেশস্থল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আলিয়া মাদরাসা মাঠ। সমাবেশের অনুমতির জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। নিরাপত্তার জন্য পুলিশকেও অবহিতকরণ চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটাতে চান তারা। এ লক্ষ্যে বিভাগের চারটি জেলায়ই সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও প্রচারণা চলছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন আগে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে বিভাগের চার জেলার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নিয়ে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। গণসমাবেশ নিয়ে নেতারা দিকনির্দেশনা দেন ওই বৈঠকে। এ ছাড়া সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে বিভাগের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় চলছে দলীয় সভা ও গণসংযোগ। সব বিভেদ ভুলে নেতা-কর্মীরাও দাঁড়িয়েছেন এক কাতারে।
এদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেটের আসনগুলোতে যেসব নেতা দলীয় মনোনয়ন চান, তারা গণসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সমাবেশে শোডাউন দিয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে নিজের শক্তির জানান দিতে চান তারা। এ লক্ষ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের নাম ও ছবি দিয়ে টি-শার্ট ও ক্যাপ তৈরি করাচ্ছেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অন্যরকম উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। এই কর্মসূচিকে ঘিরে সবাই সক্রিয় ও সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষও সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছেন। এই ‘গণআন্দোলনের’ মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে।
এদিকে, আজ থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষাকে সামনে রেখে গত শুক্রবার সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে এসএমপি আইনের ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রের দুই শ গজের মধ্যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিএনপির সমাবেশের নির্ধারিত দিন ২০ নভেম্বরও পরীক্ষা রয়েছে। সমাবেশস্থলের পাশে আলীয়া মাদরাসায় পরীক্ষা কেন্দ্র আছে।
এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, আলিয়া মাদরাসা মাঠের মতো বড় স্থান আর সিলেট নগরীতে নেই। এ ছাড়া সমাবেশে গণজমায়েত ঠেকাতে পরিবহন ধর্মঘট এবং নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও ধরপাকড়ের আশঙ্কা করছেন তারা। তবে দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সব বাধা দূরে ঠেলে ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ’ হবে সিলেটে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্ধারিত দিনেই গণসমাবেশ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী বিরামহীনভাবে কাজ করছেন। গণসমাবেশে যোগ দিতে মানুষ উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে। সব বাধা পেরিয়ে আগের দিন থেকেই লোকারণ্য হবে সিলেট। এটা হবে সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।’
পুলিশের জারিকৃত আদেশ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত স্থানেই সমাবেশ করতে চাই। আমাদের পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আলিয়া মাঠে গণসমাবেশ করতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মৌখিক অনুমতি পেয়েছি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে অবহিতকরণ চিঠি দিয়েছি। সমাবেশ ঘিরে পুরো সিলেটে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাধা-বিপত্তি ঠেলে সমাবেশ সফল হবে।’
