রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
উত্তরার খালে অস্ত্র

ছয় বছরেও মেলেনি তদন্তের ফল

মাহবুব মমতাজী

ছয় বছর আগে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ত্রগুলো সীমান্ত থেকে এনে নিরাপদ স্থান খুঁজে না পেয়ে খালে ফেলে দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, এটি কোনো সাধারণ অপরাধীর কাজ নয়। যারা দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া ভণ্ডুল করতে চায়, এটা তাদের কাজ। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শান্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য হুমকি এ অস্ত্রের বিষয়টি নিয়ে এখন আর পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই। এ অস্ত্র কাদের, কোথা থেকে এলো, অস্ত্র আনার উদ্দেশ্য কী কোনো কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ। বলা যায়, ঘটনার পর ছয় বছরেও মেলেনি সেই তদন্তের ফলাফল। ২০১৬ সালের ১৮ জুন তিন দফায় বিপুলসংখ্যক পিস্তল, এসএমজি, গুলি ও গোলাবারুদ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর তুরাগ থানায় তিনটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। প্রথম জিডির নম্বর-৭৪১। ওই তিন জিডি ধরেই ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সিটি-স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ তদন্ত শুরু করে। ছয় বছর তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি সিটিটিসি। এর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছেন সংস্থাটির কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা। এখনো সিটিটিসিতেই তদন্তাধীন আছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তুরাগ থানায় হওয়া জিডি পর্যালেচনা করে এবং স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উদ্ধার অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল অকেজো। এগুলো পরিত্যক্ত ছিল।

তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এমন একজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি হলেন সিটিটিসির তৎকালীন পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি রাজধানীর কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

তিনি জানান, যত দিন তিনি সিটিটিসিতে ছিলেন তত দিন জিডির বিষয়টি তদন্তাধীন ছিল। তারা কোনো কিছু বের করতে পারেননি। এরপর বদলির আদেশ হলে তিনি ওই সংস্থার আরেক পরিদর্শক মনিরুল ইসলামের কাছে ফাইলপত্র বুঝিয়ে দিয়ে আসেন।

সিটিটিসির সেই মনিরুল ইসলাম বর্তমানে যশোরের মনিরামপুর থানার ওসি। মনিরুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ওই জিডিগুলো তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটিতে তিনি সহায়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। তবে তিনি যত দিন ছিলেন তত দিন তা তদন্তাধীনই ছিল। পরে পরিদর্শক বাশার সেই তদন্ত দেখভাল করছিলেন।

তুরাগ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৮ জুন প্রথম দফায় উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ী খাল থেকে সাতটি কালো ব্যাগের ভিতর থেকে ৯৫টি ৭.৬২ এমএম পিস্তল, দুটি ৯ এমএম পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগজিন (২৬৩টি এসএমজি), ১ হাজার ৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট, ১৮০টি ক্লিনিং রড ও ১০৪টি স্প্রিংযুক্ত বাক্স উদ্ধার করা হয়। ১৯ জুন ওই খাল থেকে আরও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ব্যাগে ছিল এসএমজির ৩২টি ম্যাগজিন ও ৮টি ক্লিনিং রড। ২৫ জুন একই এলাকার অন্য একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয় আরও তিনটি ব্যাগ। তাতে ৫টি ওয়াকিটকি, ২টি ট্রান্সমিটার, ২টি ফিডার কেবল, ২২টি কৌটা (যার মধ্যে ছিল আইসি, ট্রানজিস্টর, ক্যাপাসিটর ও সার্কিট), ৭ প্যাকেট বিস্ফোরক জেল, ৪০টি পলিথিনের ব্যাগে থাকা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং ৩২৫টি রুপালি ও সবুজ রঙের স্প্রিংযুক্ত বাক্স। এ ছাড়া আরও কিছু বৈদ্যুতিক ডিভাইসও উদ্ধার করা হয়। এ অস্ত্র উদ্ধারের ১২ দিন পর রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা ঘটে।

সিটিটিসি সূত্র জানান, তদন্তের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, জঙ্গিরা ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতার জন্য এ অস্ত্র এনেছে। কিন্তু হোলি আর্টিজানসহ কয়েকটি জঙ্গি হামলায় যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, দিয়াবাড়ীর খাল থেকে উদ্ধার অস্ত্রের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। হোলি আর্টিজানে একে ২২ রাইফেল ও ৭.৬৫ পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছিল। আর দিয়াবাড়ীর অস্ত্রগুলো কোথায় তৈরি এবং কী ধরনের সে সম্পর্কে কিছুই জানাননি তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর