রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা রাখার যৌক্তিক ও অযৌক্তিকতা বিষয়ক গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে ছাত্র ফেডারেশনের আয়োজনে এ সংলাপ অনুুষ্ঠিত হয়। সংলাপকালে বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের কোনো ভর্তি, চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি রাখার বিশেষ যৌক্তিকতা দেখি না। কোটা শব্দটাই একটা অযৌক্তিক শব্দ। প্রত্যেকে তার মেধার ভিত্তিতে একটা জায়গায় আসবে এটাই যৌক্তিক। তবে প্রতিবন্ধী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তির কথা আলাদা। সেটা অবস্থাভেদে বিবেচিত হতে পারে। এ ছাড়া এক্ষেত্রেও মেধাবী যাচাইয়ের ন্যূনতম একটা মানদণ্ড থাকা উচিত। মেধাবী মানুষরাই রাষ্ট্র চালাতে পারে, মেধাহীন কেউ রাষ্ট্র চালাতে পারে না। কোটা বিষয়টাই একটা বিতর্কিত বিষয়। তার মধ্যে আবার পৌষ্য কোটা! সুবিধাভোগীরা অনৈতিকভাবে সুযোগ নিতেই মূলত এই কোটার সৃষ্টি করেছে। আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, যে কোনো কোটা থাকলেই অযোগ্য মানবসম্পদ তৈরির একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। কোটা বিষয়টা একটা শ্রেণির প্রতি আরেকটা শ্রেণির বিদ্বেষের কারণ। অনগ্রসর কোনো গোষ্ঠী থাকলে সেটা আলোচনা সাপেক্ষে বিবেচনা করা যায়।
কিন্তু বিশেষ একটি শ্রেণির সুবিধার জন্য পোষ্য কোটা সৃষ্টি অযৌক্তিক।
মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও কোটা বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর। আবার সৃষ্টি হয়েছে পৌষ্য কোটা। যেটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য! কোটা থাকতে পারে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সন্তানদের ক্ষেত্রে, যারা আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, চরাঞ্চলের মানুষ। পাকিস্তান আমলে বাঙালি মেধাবীদের বঞ্চিত করা হতো এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মেধাবীদের হত্যা করা হয়েছিল। আর এখন আইনসঙ্গত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
গণসংলাপে অংশ নেন- রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর, রাবি শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না, রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ খান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ প্রমুখ।
রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহাব্বত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের সংগঠক আশিকুল্লাহ মুহিব। গণসংলাপে আমন্ত্রিত অতিথিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
