শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

গুদামে ধান-চাল দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

গুদামে ধান-চাল দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের

ধান-চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা উত্তরাঞ্চল। তবে গত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি গেলেও ধান সংগ্রহে ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ। ফলে ধানের রাজ্যে গুদাম খালি। এবার গুদামে ধান-চাল দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের। সরকারি দরের চেয়ে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা গুদামে সরবরাহ করেননি। রাজশাহী বিভাগে দুই মাসে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ছয় মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬ মেট্রিক টন। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন। সংগ্রহের হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন। সংগ্রহের হার ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। তবে খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো সময় আছে ধান-চাল সংগ্রহের। এ সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ করা যাবে। জানা গেছে, আমন মৌসুম শেষে সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে ২৮ টাকা কেজি। আর সিদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করা হয় ৪২ টাকা কেজি। বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি ও চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। কৃষক ও মিলাররা ধান ও চাল বাজারেই বিক্রি করছেন বেশি। কৃষকরা বলছেন, সরকারি যে দাম তার চেয়ে বাজারে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই বাজারেই বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারি গুদামে ধান-চাল দিলে তাদের ক্ষতি হবে। চলতি ধান-চাল কেনা মৌসুম শুরু হয়েছে গত বছরের ১৭ নভেম্বর। চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৩ মেট্রিক টন। জেলায় এক কেজিও ধান সংগ্রহ হয়নি। কিন্তু চাল সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন। জেলায় সরকারি গুদামে চাল প্রদানে মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হয় ৫ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন। চুক্তিকৃত মিল আছে ৩৬টি। চুক্তিযোগ্য মিল আছে ১৪৩টি।

জেলার বোয়ালিয়ায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৪ মেট্রিক টন। এখানে সংগ্রহ শূন্য। পবা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৮৯৪ মেট্রিক টন। মোহনপুরে ১৩৭ মেট্রিক টন থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে ৫৫৭ মেট্রিক টন। বাগমারায় লক্ষ্যমাত্রা ৯৮ মেট্রিক টন। তবে এ উপজেলায় সংগ্রহ শূন্য। তানোরে ৩৪৯ লক্ষ্যমাত্রায় সংগ্রহ ৫৬ মেট্রিক টন। গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৮৯৬ লক্ষ্যমাত্রায় সংগ্রহ মাত্র ১০ মেট্রিক টন। পুঠিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ৩৮৩, সংগ্রহ ৭৫ মেট্রিক টন। দুর্গাপুরে ৯৭ মেট্রিক টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। চারঘাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ মেট্রিক টন, সংগ্রহ শূন্য। বাগমারা উপজেলার কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, স্থানীয় বাজারে আমরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছি। গুদামে ধান দিলে অন্যান্য অসুবিধাও আছে। যেমন সরকার নির্ধারিত তাপমাত্রায় ধান শুকানো, ধুলা-বালি পরিষ্কার করে গুদামে পৌঁছে দেওয়া। এ ছাড়া টাকা পেতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপল এলাকার কামাল অটোরাইস মিলের মালিক কামাল উদ্দিন জানান, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি এক কেজি চালও সরবরাহ করেননি। বাজারে সবচেয়ে সস্তা ধান স্বর্ণা প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২৪০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় ধান কিনতে পারিনি। সরকারি গুদামে কীভাবে চাল সরবরাহ করব? কামালের অভিযোগ, বড় মিল মালিকরা চড়া দামে ধান কিনছেন, ফলে ধানের দাম বাড়ছে। রাজশাহী চালকল মিল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে প্রতি কেজিতে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, অথচ সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। এ কারণে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে চাচ্ছেন না। আমরা সরকারকে সহায়তা করার জন্য গত তিন বছর ধরে লোকসানে গুদামে চাল সরবরাহ করছি। এ বছর মিল মালিকদের ক্ষতি হবে কয়েক কোটি টাকা। আগামী মৌসুমে ধান-চালের দাম সমন্বয় করা না হলে সরকারি ক্রয় অভিযান দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না। রাজশাহী জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (ইনচার্জ) এ কে এম ফজলুল হক বলেন, আমাদের দামের চেয়ে বাজারেই দাম বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর