সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রতিবন্ধীদের তৈরি পণ্য দেশজুড়ে

আফজাল হোসেন, টঙ্গী

প্রতিবন্ধীদের তৈরি পণ্য দেশজুড়ে

গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশনরোড এলাকায় অবস্থিত শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্প। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধীদের তৈরি মুক্তা পানিসহ শতাধিক প্লাস্টিক পণ্য এখন দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়ে আসছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিবন্ধীরা সমাজ বা দেশের বোঝা নন। তারা পিছিয়ে নেই অনেক কাজে। বরং মানসিক শক্তি, উন্নত প্রশিক্ষণ আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে কাজ করে চলছে প্রতিবন্ধীরাও। অন্যদের মতো কাজ করে উপার্জনের মাধ্যমে নিজেদের করছেন স্বাবলম্বী। তাদের অনন্য সফল কর্মময় জীবনের সাক্ষ্য দিচ্ছে টঙ্গীর ‘মৈত্রী শিল্প’ পণ্য। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ২৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করলেও এর মধ্যে ৯০ ভাগ শারীরিক প্রতিবন্ধী, বাকপ্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম কাজ করছেন।

প্রতিবন্ধীদের তৈরি জীবাণুমুক্ত এই মুক্তা পানি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের সর্বত্র। আমেরিকান বিশ্ববিখ্যাত ওয়াটার পিউরিফিকেশন অ্যান্ড বটলিং প্লান্ট মেশিনারিজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হতে আমদানিকৃত মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট। অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা ১১টি ধাপে রিভার্স অসমোসিস সিস্টেমে পরিশোধিত হয় এই পানি। যে কারণে মুক্তা বোতলজাত পানি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকর ও জীবাণুমুক্ত। বাজারে প্রচলিত অন্যান্য বোতলজাত পানির তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ যা মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। মুক্তা বোতলজাত পানির পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে- প্লেট, মগ, বাটি, কনটেইনার, গামলা, বালতি, জগসহ শতাধিক পণ্য। এখানকার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়লব্ধ আয় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণেই ব্যয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া কর্মরত শ্রমিকরা বিনামূল্যে পাচ্ছে চিকিৎসাসেবা, বছর বছর পাচ্ছেন বাড়তি বেতন। বেতন-ভাতা নিয়ে নেই শ্রমিক অসন্তোষ। ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করছেন বেতন-ভাতা। ভালো কাজের জন্য পাচ্ছেন পুরস্কারও। পরিকল্পনা চলছে আবাসন ব্যবস্থার। বিএসটিআই, আইসিডিডিআরবি ও বিসিআইআরের রিপোর্ট অনুযায়ী মুক্তা পানি বাজারে প্রচলিত অন্যান্য বোতলজাত পানির তুলনায় উৎকৃষ্ট। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান পরিচালক মো. সেলিম খান (যুগ্ম সচিব) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় প্রতিবন্ধীরা এগিয়ে যাচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মিনারেল কম্পোজিশনের মাত্রা রক্ষা করে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত মুক্তা পানি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং দেশের সবকটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ব্যবহার হচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শ্রমিক অলিয়ার রহমান বলেন, আগের তুলনায় শ্রমিকরা এখন অনেক ভালো আছেন। এখন আর বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। অনেকটাই পাল্টে গেছে। এ বিষয়ে টঙ্গী সিকদার ইয়ার্ন ডাইং কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, অন্যান্য পানির তুলনায় মুক্তা পানির গুণগত মান অনেক ভালো।

তাই আমি নিজে এবং আমার অফিসে এই পানি ব্যবহার করি। কারখানার ব্যবস্থাপক মো. মহসীন আলী বলেন, দেশব্যাপী মুক্তা পানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর