রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আরডিএর নতুন মাস্টারপ্ল্যানও আগের মতো

আড়াই কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ২৪ বছরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) সাড়ে তিন বছর সময় নিয়ে তৈরি করেছে এ মাস্টারপ্ল্যান। সহযোগিতা নিয়েছে তিনটি দেশি-বিদেশি ফার্মের। তবে ২৪ বছরের রাজশাহীর যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে তাতে বিশেষ কিছু নেই। ২৪ বছর আগে যে বিষয়গুলো ছিল, সেটিই পুনরাবৃত্তি করে শুধু দুই-একটি বিষয় যোগ হয়েছে। এ মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, সেটি অতিরিক্ত বলে মনে করছেন নগরবাসী। একই সঙ্গে মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে তথ্য গোপন ও সরকারি টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ আছে। মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে বরাদ্দ হয়েছে ২১ কোটি টাকা। আর রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নগর পরিকল্পনা শাখার পরিকল্পক বলছেন, মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে বরাদ্দ ১৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের তিন কোটি টাকা নয়-ছয়ের চেষ্টা করছে আরডিএ-এর পরিকল্পনা শাখা। যে টাকা সরকার ফেরত পাওয়ার কথা। জানা গেছে, আরডিএর ১৭টি জোন নিয়ে করা হয়েছে মাস্টারপ্ল্যান। আগামীর রাজশাহী কেমন হবে তা নিয়ে আরডিএর নগর পরিকল্পনা শাখা এ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে কাজ করেছে এডিপিসি, ডেটেক্স, থ্র্যোই নামে তিনটি ফার্ম। এর আগে গত ২০০৪ সালে ২৪ বছরের জন্য আরডিএ কর্তৃপক্ষ পুরো রাজশাহীর ওপর প্ল্যান তৈরি করেছিল। এ প্ল্যানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এবারের মাস্টারপ্ল্যানে বিশেষত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। আগের প্ল্যানে যা ছিল তার সঙ্গে সামান্য কিছু যোগ হয়েছে। এবার মাস্টারপ্ল্যানে যোগ হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। এর মধ্যে আছে চার ধরনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংবেদনশীল, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, অগ্নিনির্বাপণ, ওয়াটার রিজার্ভ, বড় ভবন তৈরি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের জন্য রাস্তা। নতুন মাস্টারপ্ল্যানে এ কয়টি বিষয় বিশেষত্ব বলা হলেও দেখা গেছে, অগ্নিনির্বাপণের জন্য ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা আগের প্ল্যানেও ছিল, এবারও তাই আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভূমিকম্প এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আগে যে নির্দেশনা ছিল, সেখানে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় যোগ হয়েছে। অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অনায়াসে যেতে পারে সেই পরিমাণ রাস্তা রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে, যা মাস্টারপ্ল্যানে সংযুক্ত হয়েছে। ২৪ বছরের যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বড় বড় রাস্তাঘাট, আগামীর রাজশাহী কেমন হবে, কতটা নিরাপদ হবে, নগরায়ণ কেমন হবে, আরডিএর পরিধির মধ্যে যে জায়গা আছে সেসব জায়গার রাস্তাঘাট, বসতি কেমন হবে তার কিছুই নেই। জানা যায়, রাজশাহীর মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। কিন্তু আরডিএর প্ল্যানিং শাখা তা করতে পারেনি। যদিও গত ডিসেম্বরে এই মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়। আর জানুয়ারির মধ্যে উন্মুক্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো মাস্টারপ্ল্যান উন্মুক্ত হয়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তাদের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আরডিএর নগর পরিকল্পক শাখা বলছে, কাজের বিল ১৮ কোটি টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের ব্যাংকের হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়, ১৮ কোটি টাকার পরও ওই হিসাব নম্বরে এখনো ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবশিষ্ট আছে। পূর্ত-অডিট অধিদফতর, সেগুনবাগিচা থেকে এ অডিট করেছে। তারাও এ প্রকল্পের কাগজপত্রে ২১ কোটি টাকা পেয়েছেন। একই সঙ্গে এখনো ব্যাংকে যে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আছে তার কাগজপত্রও অডিট বিভাগ নিয়ে গেছে। সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের যে অবশিষ্ট টাকা আছে তার কিছু অংশ রেখে কিছু অংশ উত্তোলনের চেষ্টা করেন প্রকল্প পরিচালক আরডিএর নগর পরিকল্পক আজমেরি আফসারী। তিনি এই ৩ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করার চেষ্টা করছেন। সেই টাকা উত্তোলনের চেক ইস্যু করা হয় ২০২২ সালের ৩০ জুনের তারিখ দিয়ে। ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের বর্তমান অ্যাকাউন্টে যে টাকা আছে তা পুরোটাই সরকারের কাছে হস্তান্তর হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে আগের তারিখ দিয়ে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা উঠিয়ে বাকি টাকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন প্রকল্প পরিচালক- এমন অভিযোগ আছে।

তবে আরডিএর নগর পরিকল্পক আজমেরি আফসারী বলেন, নতুন মাস্টারপ্ল্যান দ্রুত উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের ২১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি চেক লিখি না। আর আমি এ বিষয়ে জানিও না।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর