শিরোনাম
শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রাজশাহী

♦ দুই কারখানা বন্ধ ♦ দুটি চলছে খুঁড়িয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে স্বাধীনতার পর অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি কর্মসংস্থান। এ ক্ষেত্রে অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রাজশাহী। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য।

ষাটের দশকে রাজশাহীতে সরকারিভাবে চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল ও রেশমের বড় চারটি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। অবহেলা, লোকসানে এর দুটি কার্যত বন্ধ, অন্য দুটিও চলছে খুঁড়িয়ে। এরপর তেমন আর ভারী কোনো শিল্পকারখানা এখানে গড়ে ওঠেনি। শিল্পায়নের দিক থেকে রাজশাহী বরাবরই থেকে গেছে অবহেলায়। এখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা অন্য অঞ্চলে গিয়ে বিনিয়োগ করছেন।

স্বাধীনতার আগে রাজশাহীতে বৃহৎ চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল মিল ও রেশম কারখানা গড়ে তোলা হয়। ষাটের দশকে এসব কারখানা গড়ে ওঠে পুরোপুরি সরকারি উদ্যোগে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র ভিন্ন। এক প্রকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান। লোকসানে পড়ে একের পর এক বিপর্যয় ঘটায় কাজ হারিয়েছেন অনেক শ্রমিক। তাদের মধ্যে অনেকে বেকার, অনেকে জড়িয়েছেন অন্য পেশায়। ১৯৭৪ সালে ২৫ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের বিভিন্ন অংশ এখন ইজারা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইজারার টাকার ওপর ভর করেই এখন পরিচালিত হচ্ছে একসময়ে উত্তরাঞ্চলে সুতার চাহিদা মেটানো টেক্সটাইল মিলটি। মিলের এখন নিজস্ব কোনো উৎপাদন কার্যক্রম চালু নেই। মিলের ব্যবস্থাপক (কারিগরি) ও মিল ইনচার্জ রবিউল করিম জানান, এখন মিলের দেখাশোনার জন্য পাঁচজন স্থায়ী ও ১৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী পাটকলও এখন মৃতপ্রায়। ১৯৭২ সালে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালীতে চালু হয় রাজশাহীর একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন পাটকলটি। লোকসান দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই পাটকলটি বন্ধ করে সরকার। এতে কাজ হারান ১ হাজার ২০৯ জন স্থায়ী এবং ১ হাজার ৫০ জন বদলি শ্রমিক। জুট মিলের ১০০ মৃত শ্রমিকের গ্র্যাচুইটি, পিএফ ও বীমার টাকা এখনো আটকে আছে। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে চাকরি হারানো শ্রমিকরা কিছু টাকা পেলেও আগেই মারা যাওয়া ১০০ জনের পরিবার তাদের প্রাপ্য অর্থ এখনো পায়নি। পাওনা টাকার দাবিতে তাদের মাঝেমধ্যেই বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করতে দেখা যায়। এ এলাকার ঐতিহ্য রাজশাহী সিল্ক (রেশম)। সুপ্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহীর আবহাওয়া রেশম চাষের অনুকূলে। রাজশাহী শহরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয় রাজশাহী রেশম কারখানা। আশির দশকের শেষ দিকে ৩ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে তুঁত চাষ হতো। মূলত এ সময়টিকেই এ অঞ্চলে রেশম উৎপাদনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে রেশম কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ শ্রমিক। ২০১৮ সালের ২৭ মে পরীক্ষামূলক কারখানার পাঁচটি লুম চালু করা হয়। এরপর আরও ১৪টি লুম চালু করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি মোট ১৯টি লুম নিয়ে রাজশাহী রেশম কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাপড় উৎপাদন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে কারখানার আরও ২৩টি লুম চালুর পরিকল্পনা আছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও শ্রমিকরা পাওনার জন্য প্রতিদিনই মিল গেটে বিক্ষোভ করছেন। বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, বিভিন্ন কারণেই ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প ঝুঁকিতে। তবে পরিকল্পনা নিলেই রেশমের ঐতিহ্য ফেরানো সম্ভব। ভালো নেই রাজশাহীর আরেক ঐতিহ্যবাহী কারখানা চিনিকল। এ চিনিকলে চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৫-৬৬ সালে। পরে ১৯৭২ সালে এ প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ঘোষণা করে সরকার। রাজশাহী অঞ্চলে আগে আখ চাষির সংখ্যা বেশি ছিল। চিনিকলে আখ দিয়ে সময়মতো টাকা না পাওয়াসহ নানা কারণে কমতে থাকে চাষির সংখ্যা। ২০২০ সালের দিকে রাজশাহীসহ দেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তবে কারখানাটি এখনো রাষ্ট্রীয় মালিকানাতেই চলছে। তবে আখের অভাবে ২০২১-২২ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলটি চলেছে মাত্র ১৯ দিন।

উন্নয়ন কর্মী সুব্রত পাল বলেন, ‘বড় বড় রাস্তা আর ভবন তোলার মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকছি। অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের চলবে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা কমাতে হলে কর্মসংস্থানের কোনো বিকল্প নেই।’

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘তরুণ-যুবকদের বেকারত্ব দূর করতে রাজশাহীর বিভিন্ন কলকারখানা পুরোপুরি চালু করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। এটি দুঃখজনক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর